রাঙ্গুনিয়ায় প্রশাসনের অভিযানের পরও টায়ার পুড়িয়ে কালো তেল ও বিটুমিন তৈরির কারখানা বন্ধ করা যায়নি। উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের সত্যপীর মাজার সংলগ্ন কাপ্তাই সড়কের পাশে পাহাড়ের পাদদেশ সংলগ্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটির কার্যক্রম চলছে। কারখানাটির কালো ধোঁয়া ও টায়ার টিউব পোড়ানোর বিষাক্ত গ্যাসের গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এতে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় কৃষকদের একমাত্র সেচের মাধ্যম সত্যপীর খালটিতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে কারখানাটি দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানাটির দক্ষিণে সারি সারি পাহাড় ও সত্যপীর মাজার, পূর্ব পাশে কৃষি জমি ও ঐতিহ্যবাহী সৈয়দা সেলিমা কাদের ডিগ্রি কলেজ এবং পশ্চিমে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একাধিক বসতঘর। দক্ষিণে রয়েছে সত্যপীর খাল এবং এর পাশেই জনগুরুত্বপূর্ণ কাপ্তাই সড়ক ও স্থানীয় এলাকাবাসীর বসতঘর। এ সবের মাঝেই কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন জায়গায় কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে। কাপ্তাই সড়ক থেকেই নাকে আসছে টায়ার পোড়ানোর গন্ধ। তা ছড়িয়েছে আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত। দুর্গন্ধে নাক চেপে হাঁটতে দেখা গেছে পথচারীসহ পাশের কলেজের শিক্ষার্থীদের।
এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বহিরাগত লোকজন ‘হামিম অয়েল কোম্পানি’ নামে এই কারখানাটি বছরখানেক আগে স্থাপন করেছেন। শুরু থেকেই স্থানীয়রা এটি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল। এমনকি এটি বন্ধে প্রশাসন একবার অভিযান চালিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দেন, বিচ্ছিন্ন করে দেন বৈদ্যুতিক সংযোগ। অভিযানের পরও ক্ষতিকর কারখানাটি বন্ধ করা যায়নি।
এ বিষয়ে সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, এই কারখানার কারণে শুধু পোমরাবাসীই নয়, কাপ্তাই সড়ক পথে চলাচলকারী জনসাধারণ এবং দূরদূরান্ত থেকে পোমরা সত্যপীর মাজার জেয়ারতে আসা মানুষও ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে। আমরা উপজেলা পরিষদের সভায় এটি বন্ধের প্রস্তাব পাশ করেছি। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জহির আহমেদ চৌধুরী বলেন, তারা ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার সময় পরিবেশ দূষণ করবে না এরকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, পরিবেশ দূষিত করছে। তাই তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলা করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে কারখানার কর্মকর্তা মো. ইসমাঈল জানান, খালে যেন বর্জ্য না পড়ে সে জন্য উন্নত মেশিন আনা হয়েছে। দুর্গন্ধ যাতে না হয়, সে জন্যও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্যেও আবেদন করেছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত মারজান হোসাইন বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কারখানা থাকা কোনো মতেই উচিত নয়। কারখানাটি বন্ধে এর আগেও অভিযান চালানো হয়েছিল। বৈদ্যুতিক সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তারা রাতের আঁধারে সম্ভবত জেনারেটর চালিয়ে এই কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে এটির ব্যাপারে শিগগিরই অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।