‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে উপজীব্য করে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস- ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে রাঙামাটি জেলা শহরের কে কে রায় সড়ক এলাকার একটি রেস্তেরাঁয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ‘বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটি’র প্রধান সংগঠক আলোকচিত্রী সবুজ চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও উপবন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক ড. সুপ্রিয় চাকমা, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রাঙামাটি জেলা সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার, দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পাদক মো. ফজলে এলাহী, উন্নয়নকর্মী মংলা মেন্ট, প্রাণজিৎ দেওয়ান ও মিলন চাকমা, পরিবেশকর্মী নুকু চাকমা, জেলা রোভার স্কাউটের কমিশনার মো. নুরুল আবছার, রাঙামাটি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সৈকত রঞ্জন চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় ‘বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটি’র সংগঠক সাংবাদিক সমির মল্লিকের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির আরেক সংগঠক সাথোয়াই মারমা। সংগঠনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোকপাত করেন সংগঠক প্রান্ত রনি। আলোচনা সভায় পরিবেশ-প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সেক্টরের বিশিষ্টজনরা অভিজ্ঞতার কথা বলেন। এসময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক ও সংরক্ষিত বন রক্ষায় জোর দাবি জানিয়েছেন।
সভায় প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সারাদেশে ২০০টির অধিক বন্য হাতি রয়েছে। এরমধ্যে যেখানে হাতির বিচরণ রয়েছে; সেসব স্থানে হাতি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় মানুষ হাতি রক্ষায় কাজ করছেন। আমরা হাতি রক্ষায় স্থানীয়দের নিয়ে ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্ট টিম’ও গঠন করেছি। তারা কোনো হাতি অসুস্থ হলে আমাদের জানান। সম্প্রতি সময়ে রাঙামাটি জেলার লংগদু এলাকায় একটি হাতি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে আমরা সেই হাতিটিকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছি। ইতোমধ্যে ওই এলাকায় একটি নতুন হাতি শাবক জন্ম নিয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগিতার মতো ছিল; কে আগে হাতির শাবকটিকে দেখেছে। এতে করে বোঝাই যায় হাতির সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্ব কমে আসছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে।’
ডিএফও আরও বলেন, পরিবেশ-প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ তৎপর রয়েছে। তবে আমাদেরও কাজের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আপনাদের এই আয়োজনে আমাকে সম্পৃক্ত রক্ষায় আমি খুশি হয়েছি। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারব।’ আলোচনায় অন্য বক্তারা কথার উদ্বৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, এখানে অনেক বিজ্ঞজনের আলাপ শুনেছি। সবার এই বিষয়গুলো নিয়ে যথেষ্ট জানাশোনা রয়েছে। আপনাদের থেকে সাধারণ মানুষ বিষয়গুলো জানতে পারবেন। মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা বাড়বে।’
এসময় বক্তারা বলেন, জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হলে বন্যপ্রাণী রক্ষা করা খুবই জরুরি। প্রত্যেকটি বন্যপ্রাণী প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ভ’মিকা রাখে। তবে জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণীকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের বনগুলোকে রক্ষা করতে হবে। বন রক্ষা করা না গেলে বন্যপ্রাণীরা থাকবে কোথায়? সবার তাদের আবাসস্থল ও খাদ্যের ব্যবস্থাপনাও প্রয়োজন। বন্যপ্রাণী চোরাকারবারসহ নানান কারণে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেকগুলো বিলুপ্তপ্রায়। তবে প্রকৃতিতে যেগুলো এখনো টিকে আছে সেগুলো রক্ষা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ‘সেভ বায়োডাইভার্সিটি; সেভ আর্থ’ শীর্ষক একটি জনসচেতনতামূলক পোস্টার উন্মোচন করেন অতিথিরা। বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস ২০২৫ উদযাপন ও পোস্টার উন্মোচনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করলো পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ-প্রকৃতিবিষয়ক সংগঠন ‘বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটি’। সংগঠনটি পরিবেশ সচেতনতা, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠকরা।