রাখাইনের যে খবর পাচ্ছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে যুদ্ধ

| বুধবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর ভয়াবহ লড়াইয়ের খবর রাখাইন রাজ্যের স্বজনদের মাধ্যমে পাচ্ছেন এপারের কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। স্বজনদের নিয়ে তাদের মধ্যে কাজ করছে ভয়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যোগযোগের সমস্যার কারণে অনেকে আবার সঠিক খবরও পাচ্ছেন না। যেটুকু খবর মিলছে, তাতে রাখাইনের পরিস্থিতি খুব নাজুক চেহারা পেয়েছে বলে ক্যাম্পবাসী রোহিঙ্গাদের ধারণা। সেখানে লড়াইয়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বসতিতে নিয়মিত অগ্নিসংযোগও করা হচ্ছে। আরাকান আর্মির সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে এমন সন্দেহ থেকে হেলিকপ্টারে অনবরত গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। তাতে অনেকে হতাহত হচ্ছেন; কিন্তু চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। প্রাণ বাঁচাতে অনেকে বাড়িঘরও ছেড়েছেন।

সংঘাতের মধ্যে রাখাইন রাজ্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অনুপ্রবেশ রোধে এরই মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা নিয়েছে বিজিবি। ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বসবাস করা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে মনে করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়। খবর বিডিনিউজের।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল বিকালে বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্র, অসমর্থিত মাধ্যম থেকে যে খবরাখবর পাচ্ছি তাতে, রাখাইনের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। সেখানে আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে। এখানে যারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছেন, তাদের স্বজনরা সেখানে রয়েছেন। ফলে সেখানকার যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া এখানে পড়বে, এটাই তো স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। বাহিনীগুলো হলো তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মিটিএনএলএ, আরাকান আর্মিএএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মিএমএনডিএএ। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে। আরাকান আর্মি এই জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।

রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। স্থানীয়রা বলছেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া, তুলাতুলি ও কাঞ্জরপাড়া সীমান্ত, উখিয়া উপজেলার পালংখালির আনজুমান পাড়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা তুমব্রু ও ঘুমধুম এলাকায় বেশি গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

গতকাল টেকনাফ ও উখিয়া বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী অন্তত ১০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে লড়াইয়ের মধ্যে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। সে কারণে অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশই কোথাও যেতে পারছেন না। তারা কার্যত অবরুদ্ধ দশায় পড়েছেন।

টেকনাফের জাদিমুরা ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উপকমিউনিটি নেতা (সাবমাঝি) মোহাম্মদ আয়াজ বলেন, আগে বার্মার মানুষের খোঁজখবর নিতাম। বার্মার মানুষ সরাসরি গুলি মারছে মুসলমান পাড়ায়। এক পাড়া থেকে অন্যপাড়ায় পালিয়ে যাচ্ছে, মানুষগুলো খুব অসুবিধায়। রাস্তাঘাটে বা কোথাও বের হতে পারছে না। খুব অসুবিধায় আছে। খেতে পারছে কিনা জানি না। তারা বাংলাদেশে আসবে কিনা জানি না। তারা কোনোদিকে বের হতে পারছে না। সেখানে বার্মার সরকার আছে।

তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে ওই রাজ্যের একাধিক গ্রামে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে জান্তা সরকারের সেনারা। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছ থেকে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিতে অনেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক রোহিঙ্গার হতাহতের খবর আসছে আমাদের কাছে। তবে নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় ঠিকমত যোগাযোগও রাখতে পারছেন না বলে জানান মোহাম্মদ আলম।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, মিয়ানমার অভ্যন্তরে অব্যাহত সংঘর্ষে সেখানকার বেশ কিছু রোহিঙ্গা বসতি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। আরাকানে বসবাসকারি রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য মতে, এরই মধ্যে কয়েক শত রোহিঙ্গা হতাহত হয়েছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি ও গোলাবর্ষণে কয়েকটি গ্রামের বসতি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। অনেকে নিজের গ্রামে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এতে খাদ্যসহ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণেরও সংকট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের নিজ এলাকা ছাড়া কোথাও যাতায়ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

আরাকানে এখনও পাঁচ থেকে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আশ্রিত আত্মীয়স্বজনরা চরম উদ্বেগউৎকণ্ঠায় রয়েছে। অথচ তারা কোনো খবর পাচ্ছেন না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন, প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে নোটিস
পরবর্তী নিবন্ধশৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এক ছাত্রকে হলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা