গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট–পরিবর্তনের সুযোগে রাউজান থানা থেকে লুট হওয়া ৫৭ অস্ত্রের মধ্যে এখনো উদ্ধার করা যায়নি ১১টি অস্ত্র। ধরা পড়েনি অস্ত্র লুটের সাথে জড়িতদের কেউ। স্থানীয়রা বলছেন, থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের পাশাপাশি স্বৈরাচারের দোসরদের নামে যেসব লাইসেন্সধারী ছোট বড় অস্ত্র ছিল সেসব অস্ত্রের বেশির ভাগ জমা দেয়া হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে যেসব বৈধ–অবৈধ অস্ত্র রয়েছে সেসব অস্ত্রও বর্তমানে সন্ত্রাস ও অপরাধের সাথে জড়িতদের হাতে রয়েছে। আর এসব অস্ত্র এখন রাউজানের বিভিন্ন স্থানে পক্ষ–বিপক্ষে সংঘাত–সংঘর্ষে ব্যবহার হচ্ছে। গুলি করে মারা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে।
স্থানীয়রা বলছেন, রাউজানে একের পর এক ঘটে চলা এসব ঘটনার মধ্যে গত ২৪ জানুয়ারি মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া গুলিতে মারা যান চট্টগ্রামের স্বনাধন্য ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। এক নিরীহ ব্যবসায়ীকে গুলি করে মারা হলেও হত্যাকারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। নিহত ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন। ৮ দিন গত হলেও তারা থানায় যাননি হত্যাকাণ্ডের মামলা করতে।
এলাকার জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত পাঁচ মাস ধরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দল উপদলে বিভক্ত হয়ে সংর্ঘষে লিপ্ত আছে। এলাকায় চাঁদাবাজি, মাটির ব্যবসা, পাহাড়, জমি, গাছ কাটা নিয়ে এলাকাভিত্তিক নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। প্রায় সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটাচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় সময় এসব ঘটনা ঘটালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পালন করছে এক রকম ‘রহস্যজনক নীরবতা’। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া প্রসঙ্গে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান চালানো যাচ্ছে না এলাকার মানুষের সহযোগিতার অভাবে।
মানুষ নানা কর্মসূচিতে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কথা বললেও কেউ পুলিশকে সন্ত্রাসীদের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে না।
নোয়াপাড়ার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর খুনের ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দক্ষিণ রাউজানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসব প্রতিবাদ সভা থেকে সন্ত্রাসী খুনিদের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়েছে। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বিএনপির বিবদমান দুটি গ্রুপের নেতৃবৃন্দ এক পক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করে আসছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ– পতিত স্বৈরাচারের আমলে যারা সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করেছে এখন নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে সেসব সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের দলে টেনে নিয়ে অরাজক পরিস্থিতি জারি রাখা হয়েছে।