রশীদ আল ফারুকী (১৯৬০–১৯৮৭)। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চিন্তাশীল গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে সুপরিচিত। শিক্ষাবিদ হিসেবেও মেধা ও মনননের উৎকর্ষতায় উদ্ভাসিত থেকেছেন তিনি। রশীদ আল ফারুকীর জন্ম ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ই মার্চ সীতাকুণ্ডের গুপ্তখালী গ্রামে। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্থানীয় টেরিয়াইল স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ছাত্রাবস্থায় যুক্ত হন প্রগতিশীল রাজনীতিতে। ’৬২–র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেবার জন্যে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছে। ’৬৪–খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় শিক্ষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার জন্যও কারাবরণ করেছেন। রশীদ আল ফারুকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি.এ (অনার্স) ও এম.এ ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৬৭–তে রাউজান কলেজে এবং ১৯৭০–এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি–এইচ.ডি. ডিগ্রি নেন। কর্মময় জীবনে তিনি বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ–এর জীবন সদস্য, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশ কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ–সভাপতি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের উপদেষ্টা–সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি সম্পাদনাও করেছেন বেশ কিছু গ্রন্থ ও পত্র–পত্রিকা।
প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনাপঞ্জীর মধ্যে রয়েছে ‘ধর্ম ও রাষ্ট্র’, ‘বাঙলার জাগরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’, ‘বাংলা উপন্যাসে মুসলমান লেখকদের অবদান’, ‘শরৎ সাহিত্য জিজ্ঞাসা’, ‘রুচি ও প্রগতি’ ইত্যাদি। তাঁর রচনা ও কর্মে মননশীলতায় ঋদ্ধ, সমাজ মনষ্ক, মানবতাবাদী ও অসামপ্রদায়িক বাঙালি সংস্কৃতির অনুরাগী এক ব্যক্তিত্বের সন্ধান মেলে। গ্রামের মানুষের মধ্যে এইসব বোধ জাগিয়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তাঁর। যেখানে সাধারণ মানুষের প্রস্তুতিতেই কেটে যায় অনেকটা সময়। সে সময়ে রশীদ আল ফারুকীর সৃষ্টিশীলতা সময়কেও যেন হারিয়ে দেয়। রাজনীতি, শিক্ষকতা, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, সাহিত্যরচনাসহ বিপুল কর্মযজ্ঞে সদা ব্যাপ্ত এক বিশাল বৈচিত্র্যময় চরিত্র। কিন্তু তা পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।
১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ ডিসেম্বর ৪৭ বছর বয়সে রশীদ আল ফারুকী মৃত্যুবরণ করেন।