বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে চাঙ্গা হচ্ছে। গত ৫ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, অর্থনীতিতে একের পর এক সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর রেমিট্যান্সে বড় উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এরপর গত অক্টোবর মাসেও রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। নভেম্বরেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছরের নভেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে চার দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার, যা গত মাসের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তিনি বলেন, সমন্বিতভাবে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ১৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। গত বছর এ সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের তুলনায় এবার ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। শফিকুল আলম জানান, নভেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে তৈরি পোশাক খাতে। এ খাত থেকে আয় হয়েছে তিন দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার, যা গত অক্টোবর মাসে ছিল ২ দশমিক ৮৪ ডলার। অর্থাৎ গত মাসের তুলনায় এ মাসে রপ্তানি পোশাক খাতে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের প্রধান বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। এর পরের অবস্থানে রয়েছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং স্পেন। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে দেশের রপ্তানি আয় ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এটি ছিল ৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় যা ১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার বেশি। ইপিবি’র তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই–অক্টোবরে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অব্যবস্থাপনা আর ভুল নীতির কারণে দেশের রপ্তানি খাতে দীর্ঘদিন চলছিল ভঙ্গুর দশা। কিন্তু এর প্রকৃত চিত্র আড়াল করে রপ্তানি খাতে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়ে আসছিল বিগত সরকার। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এবং বিভিন্ন সূচকে কারসাজি করতে এমন আত্মঘাতী কাজে লিপ্ত ছিল বিগত সরকার। তবে বর্তমানে প্রকৃত হিসাব তুলে আনার পর রপ্তানি খাতের আয়ে বড় পতন দেখা দিয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত অভিযোগে বলা হয়, দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি আয়ের উৎস তৈরি পোশাক খাতেই বড় ধস নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক বা এপ্রিল–জুন সময়ে রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) থেকে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৮৮৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার; যা আগের প্রান্তিক বা জানুয়ারি–মার্চ সময়ে আসা রপ্তানি আয়ের তুলনায় ৩৬ দশমিক ০২ শতাংশ কম। এতদিন এসব হিসাব ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে দেখানো হতো।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক টানাপড়েনে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা দেশগুলোতে। ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে পোশাক কেনা কমিয়েছে ওইসব দেশের নাগরিকরা। এই দেশগুলো বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির বড় বাজার হওয়ায় রপ্তানির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো খাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, কানাডা ও বেলজিয়াম। এই ৯টি দেশ থেকে বাংলাদেশ আরএমজি থেকে ৬৩৫ কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা মোট আরএমজি রপ্তানির ৭১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
সেহিসেবে দেখা যাচ্ছে, এই নভেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে তৈরি পোশাক খাতে। এটা অবশ্যই শুভ সংবাদ। এতো নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে রপ্তানি ঝুড়িতে শুধু একটি পণ্যের আধিপত্য। একটি পণ্য দিয়ে বাজার সম্প্রসারণ করা বেশ কঠিন। রপ্তানি আয় বাড়াতে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।