তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের আপাত কোনো সুসংবাদ নেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, উল্টো প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৪ সালের প্রথম আট মাস জানুয়ারি–আগস্টে বাজারটিতে বাংলাদেশসহ শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশেরই রপ্তানি কমেছে। তবে অন্যদের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বেশি কমেছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা চলতি বছরের প্রথম আট মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ১১ শতাংশ কম।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে মোট ৪৭১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে দেশটিতে ৭২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে এই বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক। তৈরি পোশাকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা এখন ৯ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীন। তাদের দখলে রয়েছে পোশাকের ২১ দশমিক ১৮ শতাংশ বাজার হিস্যা। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ১ হাজার ৬৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ কম।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়, এ বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থান, বন্যা ও শ্রম অসন্তোষের কারণে টানা তিন মাস পোশাক খাতের উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে আশাবাদী পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।
তাঁরা বলেন, ‘অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে আশাবাদী। তাঁর মাধ্যমে আমরা যদি দেশটি থেকে কোনো ধরনের শুল্কসুবিধা নিতে পারি, তাহলে আমাদের রপ্তানি বাড়বে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, অবিলম্বে তার অবসান হওয়া উচিত। এমনিতেই সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়, তার ওপর সমপ্রতি দেশে একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। এ সময় পোশাকশিল্পে অস্থিরতা বিদেশি ক্রেতাদের নেতিবাচক বার্তা দেবে।’ এ কথা অনস্বীকার্য যে, এ শিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি খাত এবং আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তৈরি পোশাকশিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর ডেনিমে বাংলাদেশ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সব দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম অবস্থানে ছিল। বলা যায়, আগামীতে উজ্জ্বল দিনের সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতে। অনেক চড়াই–উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাকশিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতা এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়েছে অগ্রগতির পথে। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে পোশাকশিল্পের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স আসছে তার অন্যতম খাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক অর্থ আয় করছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।’ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা আগামীতে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়বে বলে আশা করছেন। সরকার পোশাক খাতে সমস্যাগুলো সমাধানে আরো উদ্যোগী হলে অতি শিগগির ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অধিকার করবে বলে তাঁরা আশাবাদী। এ খাতকে তাই কোনোভাবেই অস্থিতিশীল হতে দেওয়া উচিত নয়। অথচ বেশ কিছুদিন ধরে এ শিল্প ঘিরে অসন্তোষ চলছে, নানা ধরনের দাবিদাওয়া জানাচ্ছে শ্রমিকরা। সামগ্রিকভাবে পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তার অবসান হওয়া দরকার। রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।