রজনীগন্ধা ডুবল কীভাবে?

পাটুরিয়ায় ফেরি ডুবি, নিখোঁজ ১, তদন্তে দুই কমিটি

| বৃহস্পতিবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের কাছে ঘন কুয়াশার মধ্যে যানবাহন নিয়ে পদ্মায় ডুবে গেছে একটি ফেরি। গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে বিআইডব্লিউটিসির ফেরি রজনীগন্ধা৭ ডুবে যাওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা সেখানে ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে কারো মৃত্যুর তথ্য মেলেনি। তবে ফেরির সেকেন্ড ড্রাইভার হুমায়ূন কবিরের (৩৯) খোঁজ মেলেনি। খবর বিডিনিউজের।

তবে রজনীগন্ধা নামের ফেরিটি গাড়ি নিয়ে কেন ডুবে গেল, সেই প্রশ্নের সুনিশ্চিত জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মালবাহী একটি ছোট জাহাজের ধাক্কার কথা বলছেন। তবে তা নাকচ করছেন ফেরিতে থাকা গাড়ির চালকরা। তাদের বক্তব্যে ফেরির পেছনের দিকে একটি গোল ঢাকনার মতো জায়গা দিয়ে নিচ থেকে পানি ওঠার কথা উঠে এসেছে। চালকরা বলছেন, সেখানে অন্য কোনো নৌযানের ধাক্কার কোনো ঘটনা দেখেননি। বরং ধীরে ধীরে কাত হয়ে ফেরিটিকে ডুবতে দেখেছেন তারা। এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষবিআইডব্লিউটিএ। দুটি কমিটিই পাঁচ সদস্যের। মানিকগঞ্জের ডিসি রেহেনা আক্তার ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তফা কামাল গতকাল দুপুরে কমিটি দুটি গঠন করার কথা জানান। সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি দুটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ফেরি উদ্ধারে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তমকে।

নারায়ণগঞ্জ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড শিপ বিল্ডার্স (এনইএস) থেকে তৈরি ফেরিটি ২০১৩ সালে বিআইডব্লিউটিসির বহরে যুক্ত হয়। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, অনেকক্ষণ ধরে ফেরিটিতে পানি উঠেছে। এ সময় ফেরি থেকে সাহায্য চেয়ে ঘাটে কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি। লোকজনের চিৎকার শুনে কয়েকটি ট্রলার ফেরির কাছে গিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

সকালে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কুয়াশার কারণে ফেরিটি নদীতে নোঙর করে ছিল। এ সময় মালবাহী একটি ছোট জাহাজের ধাক্কায় নোঙর করে থাকা ফেরিটি ডুবে যায়।

ফেরি দুর্ঘটনার সময় অনেক ট্রাক চালক ঘুমিয়ে ছিলেন। পানি উঠে ফেরি কাত হয়ে যাওয়ার পর কর্মীরা চিৎকারচেঁচামেচি করে সবাইকে নিজ দায়িত্বে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দেন।

সরকারের সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি হচ্ছে ফেরি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত। আরেক সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট ও নৌ পরিবহনের বিষয়গুলো দেখভাল করে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, ফেরি ডুবে যাচ্ছে বা সেটি বিপদে পড়েছে এমন কোনো বার্তা ফেরি থেকে ঘাটে দেওয়া হয়নি। তবে ঘাটের লোকজনেরা চিৎকার শুনছিলেন। তবে সেই চিৎকার কীসের, কোন দিক থেকে আসছিল, তা কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। তখন অনেক কুয়াশা ছিল। দুর্ঘটনার সংবাদে ফেরি দেখভালকরী সংস্থা বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এ. কে. এম মতিউর রহমানসহ ঊর্ধ্বতনরা ঘাটে আসেন। তবে সকালের পর তারা আর তেমন কিছু বলছেন না। এই কর্মকর্তার তথ্য বলছে, ফেরিতে ১৫ জন কর্মী ছিলেন। তার মধ্যে সহকারী মাস্টার হুমায়ুন কবির নিখোঁজ রয়েছেন।

ফেরিতে থাকা এক ট্রাক চালক বলছেন, ধাক্কা মারার কোনো ঘটনা দেখেননি। তিনি বলেন, তার গাড়ির ডান পাশের পাঠাতনে একটি গোল ঢাকনা ছিল। সেটি দিয়ে পানি উঠছিল। একই কথা জানান অপর এক ট্রাকে থাকা বোয়ালমারির চামড়া বেপারী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে ঘুম ভেঙে দেখি ৬টা ৬ মিনিট। আমরা এদিকওদিক ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে দেখি ফেরির পেছনে ম্যানহোলের মত ঢাকনা থেকে পানি উঠছে। এটি দেখতে পেয়ে কয়েকজন ফেরির স্টাফদের ডাকাডাকি শুরু করলেও কেউ আসেননি। প্রত্যক্ষদর্শী রিয়াজ উদ্দিন বলেন, যখন তারা ফেরি থেকে তাড়াহুড়া করে নেমে যাচ্ছিলেন, সে সময় সহকারী মাস্টার মোবাইল বা জরুরি কোনো কিছু আনতে ফেরির ভেতরে ঢোকেন। এ সময়েই নৌযানটি কাত হয়ে উল্টে পড়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলন্ত ট্রেনে শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ’, অ্যাটেনডেন্ট গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধচবিতে বাবুর্চির সাথে দুই ছাত্রলীগ নেতার যে আচরণ