রঙের কাজে নিজের লোক নিয়োগ না দেওয়ায় জালালাবাদ জমির হাউজিং এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের মালিক নিজাম পাশাকে খুন করেছে নিরাপত্তা কর্মী মো. হাছান। গ্রেপ্তারের পর হত্যার কারণ জানাতে গিয়ে হাছান পুলিশকে এ তথ্য দেয়। গত সোমবার ভোর রাতে নির্মাণাধীন ওই ভবনের পাশ থেকে ৬৫ বছর বয়সী নিজাম পাশার লাশ উদ্ধার করা হয়। খুন করার পর ময়লার স্তূপে তার লাশ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। লাশ উদ্ধারের পর থেকে ভবনের নিরাপত্তা কর্মী হাছান লাপাত্তা হয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সেলিনা ইয়াসমিন বাদী হয়ে হাছানকে আসামি করে খুলশী থানায় একটি মামলা করেন। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা থেকে হাছানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নিজাম পাশা ও হাছান উভয়ের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায়। হাছানকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিকাশে টাকা দেওয়ার ফাঁদ পেতে’ পলাতক হাছানকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিজাম পাশার মোবাইল ফোনসহ কিছু টাকা তার কাছে পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে হাছান জানায়, জালালাবাদ জমির হাউজিং এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে রঙের কাজ নিজের লোক দিয়ে করাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু নিজাম পাশা রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হাছান ‘হাত-পা বেঁধে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে’ নিজাম পাশাকে খুন করে।
নিহতের স্ত্রী সেলিনা ইয়াসমিনও তার মামলায় একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে সাত তলা ওই ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর সময় সেখানে হাছানকে দারোয়ানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু হাছান নির্মাণকাজে তার পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে চাপ দিতেন নিজাম পাশাকে। এ নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় সম্প্রতি হাছানকে আর কাজে রাখবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন নিজাম পাশা। তাতে ক্ষিপ্ত হয় হাছান।
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে হাছান পুলিশকে বলে, প্রতি সপ্তাহে ভবনের কাজ দেখতে এবং শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে সেখানে যেতেন নিজাম। রোববার আসরের নামাজ পড়তে পাশের একটি মসজিদে গিয়েছিলেন নিজাম পাশা। সেখানে অসুস্থ বোধ করায় নিজাম হাছানকে ফোন করেন। ফোন পেয়ে হাছান নিজাম পাশাকে নির্মাণাধীন ভবনে এনে তার (হাছানের) কক্ষে শুইয়ে রাখেন।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আফতাব বলেন, সন্ধ্যার আগে হাছান জিআই তার দিয়ে ঘুমন্ত নিজামের হাত এবং গামছা দিয়ে পা বেঁধে ফেলে, মুখে টেপ লাগিয়ে দেয়। পরে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে লাশ রুম থেকে বের করে অন্য জায়গায় নিয়ে আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রাখে। নিজাম পাশাকে খুন করার পর পালিয়ে যাওয়ার মত টাকা ছিল না তার কাছে। সেজন্য সে নিজামের ফোন থেকে তার (নিজামের) এক বন্ধুকে ফোন করে রডের ট্রাক ভাড়া পরিশোধের কথা বলে পাঁচ হাজার টাকা নেয়। রাতে নিজামের মেয়েকে ফোন করে আরও ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। কিন্তু সে টাকা তারা পাঠায়নি। রাত ১টা পর্যন্ত হাছান ওই ভবনে অবস্থান করে পালিয়ে জলসা মার্কেট এলাকায় চলে যায়। মঙ্গলবার সকালে নতুন একটি সিম কিনে বিভিন্ন জনকে ফোন করে নিজামকে হত্যার অভিযোগে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করে। হাছানের দাবি করা টাকার পরিমাণ পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ছিল। তবে কেউ তাকে টাকা দেয়নি। পরবর্তীতে ওই টাকা দেওয়ার টোপ ফেলেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।