আজ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদাতা দিবস পালিত হচ্ছে। এছাড়া ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। মূলত নিরাপদ রক্ত নিশ্চিতকরণ ও স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। দেশে রক্তের চাহিদা পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকছে নানা কর্মসূচি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বের ৯ কোটি ২০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়ে থাকে। তবে উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছায় রক্তদানের হার প্রতি এক হাজারে ৪০ জন হলেও উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি এক হাজারে চারজনেরও কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, দেশে অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত লাগে। সারা দেশে সরকারিভাবে ২২৩টি ব্লাড ব্যাংক বা রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে রক্তের চাহিদার একটা বড় অংশ প্রয়োজন হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য। হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে এক কোটি সত্তর লাখেরও অধিক মানুষ। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রতি মাসে এক থেকে তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও রক্তস্বল্পতা, প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, বড় অপারেশন, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের এ চাহিদা পূরণে নতুন স্বেচ্ছা রক্তদাতার কোনো বিকল্প নেই। শারীরিকভাবে সুস্থ ১৮ থেকে ৫৭ বছর বয়সের মধ্যে যে কোনো পুরুষ ও নারী রক্ত দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের ওজন থাকতে হবে অন্তত ৪৮ কেজি এবং নারীর ওজন অন্তত ৪৫ কেজি। ১২০ দিন পর পর, অর্থাৎ ৪ মাস পর পর রক্ত দেওয়া যাবে। রক্তদানে কোনো সমস্যা হয় না। কেননা, একজন মানুষের শরীরে সাড়ে ৪ থেকে ৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তদান করা হয় সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার। এটি শরীরে থাকা মোট রক্তের মাত্র অল্প ভাগ। দেশে বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকে। রক্ত সংগ্রহ করা হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ ব্যাগ। বাকি ৩ লাখ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন জনগণকে সচেতন করা। এছাড়া রক্তদানে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে এবং রক্তের কোলেস্টরেলের মাত্রাও কমে যায়। ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি মারাত্মক রোগের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। হার্ট ভালো থাকে এবং রক্তদাতা সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকেন। রক্তদানের সময় রক্তে নানা জীবাণুর উপস্থিতি আছে কি না, তা জানতে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়। ফলে রক্তদাতা জানতে পারেন তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছেন কি না। রক্তদানে শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালসের পরিমাণ কমে যায়। তাই বার্ধক্যজনিত জটিলতা দেরিতে আসে।
জানা গেছে, বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার রক্তের গ্রুপ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই অবদানের জন্য, কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কার পান। রক্তদাতা দিবসটি বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারকে উৎসর্গ করা হয়েছে। তার জন্মদিন ১৪ জুন। তার জন্মদিনের সাথে মিল রেখে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত হয়ে আসছে।