রং বিলাসে বেশি লাভ

সাথী ফসল হিসেবে চাষ হয় মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | রবিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

আখ চাষ অনেকটা সহজ। আবার লাভও বেশি। তাই চন্দনাইশে বেড়েছে আখ চাষের পরিধিও। এক কানি (৪০ শতক) জমিতে আখ চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। যুগ যুগ ধরে চন্দনাইশের কৃষকরা ধান ও অন্যান্য সবজি আবাদের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে আখ চাষ করে আসছেন। তাই চলতি মৌসুমেও ১৫০ হেক্টর (৯৩৩ কানি) জমিতে রংবিলাস জাতীয় আখ চাষ করেছেন কৃষকরা। যা বিগত মৌসুমের তুলনায় ২০ হেক্টর বেশি।

জানা গেছে, শঙ্খনদ তীরবর্তী উপজেলার সাতবাড়িয়া, হাশিমপুর, বৈলতলী, বরমা, বরকল, কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, চন্দনাইশ পৌরসদর এলাকার হারলা, ধোপাছড়ি, দোহাজারী পৌরসভার চাগাচর, জামিজুরী, জঙ্গল জামিজুরিসহ পুরো উপজেলায় অসংখ্য কৃষক আখ চাষ করেছেন। এরমধ্যে অধিকাংশ আখ চাষ হয় সাতবাড়িয়া, হাশিমপুর ও বৈলতলী ইউনিয়নে। এখানকার অধিকাংশ চাষি রংবিলাস জাতীয় আখের চাষ করেন। তবে কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয় আশ জাতীয় আখের চাষ করেন।

সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ২০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রিপন দাশ। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আখ চাষ সহজ হওয়ায় এখানে আখ চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আখ চাষে লাভও বেশি। এক কানি জমির আখ সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সমপরিমাণ আখ চাষে কৃষকের খরচ পড়ে কানি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৪০ শতক জমিতে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকারও বেশি লাভ হয়।

সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের সফল আখ চাষি মোহাম্মদ ইদ্রিস (৪৫)। তিনি চলতি মৌসুমে ৮ কানি পরিমাণ জমিতে রংবিলাস জাতীয় আখ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। তিনি ইতিমধ্যে পাইকারি হিসেবে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় আখ ক্ষেত বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি বংশানুক্রমে আখ চাষ করে আসছেন। তার পিতার অবর্তমানে তিনিই প্রায় ২৫ বছর ধরে আখ চাষের সাথে জড়িত। এছাড়া এলাকার মো. আবদুর রহিম দুই কানি, নজরুল ইসলাম এক কানি, খোকন সাড়ে তিন কানি, মো. মুছা দেড় কানি, রফিক আহমদ আড়াই কানি, আহমদ হোসেন দুই কানি, মো. ইলিয়াছ চার কানি, আবু ছৈয়দ এক কানি, নুরুল আলম এক কানি, মো. মাসুদ দেড় কানি জমিতে আখ চাষ করেছেন।

পূর্ব সাতবাড়িয়া এলাকার মো. আবদুর রহিম জানান, প্রতি মৌসুমে আখ চাষ ভালো হয়। কিন্তু চলতি মাসের শুরুর বন্যায় তাদের কিছুটা ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন্যার আগে তার দুই কানি জমির আখ জনৈক পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে দুই লাখ টাকায় বিক্রির চুক্তি হয় এবং ১০ হাজার টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেন। কিন্তু বন্যা পরবর্তী ওই পাইকারি ব্যবসায়ী তার দুই কানি জমির আখ ক্ষেত দুই লাখ টাকার পরিবর্তে দেড় লাখে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

আখ চাষে জড়িত কৃষকরা জানান, আখের বীজ রোপণ থেকে সম্পূর্ণ বিক্রির উপযোগী হতে কমপক্ষে ৯ মাস সময় লাগে। প্রতি কানি জমিতে ১০ হাজার আখ উৎপাদন হয়। তবে এখানে উপকারিতাটা হল আখ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলুসহ কয়েক প্রকার সবজির চাষ করা যায়। এতে কৃষকরা দ্বিগুন লাভবান হন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আখ সংগ্রহ করার পর আঁটি বেঁধে ট্রাকযোগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করেন। এখানকার কৃষকরা জানান, তাদের চাষকৃত আখ নরম হওয়ায় চিবিয়ে রস খাওয়া যায়। খুব মিষ্টি। তাই চন্দনাইশে উৎপাদিত রংবিলাসের চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন জানান, কৃষকদের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানসহ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে আখ চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়। চলতি মৌসুমে চন্দনাইশে ১৫০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ করেন কৃষকরা। ফলনও হয়েছে ভালো। তাই প্রতি মৌসুমেই বাড়ছে আখ চাষের পরিধি। গত মৌসুমে ১৩০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হলেও চলতি মৌসুমে আরো ২০ হেক্টর বেশি জমিতে আখ চাষ করেছেন কৃষকরা। প্রতি মৌসুমে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি আখ চাষে বাড়তি আয় করতে পারায় কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্যার পর আবারো নতুন করে আমন আবাদ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীই বিএনপিকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন : নোমান