যৌথ বাহিনীর নিয়মিত অভিযান চললে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে

চট্টগ্রামে নুরুল হক নুর

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৪ জুলাই, ২০২৫ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

আগামী নির্বাচন পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। নুর বলেছেন, ৫ আগস্টের পর চারদিন দেশ কার্যত সরকারবিহীন ছিল, তবুও কোথাও তেমন কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। অথচ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস, খুন ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ ঘটছে। সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় নুরুল হক নুর এসব কথা বলেন। এরপর তিনি প্রেসক্লাবের জুলাই স্মৃতি হলে চট্টগ্রাম মহানগর গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্র সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটলেও বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। এক দলের নেতাকর্মীরা অন্য দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অশোভন উক্তি ও আচরণ করছে, যা রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক সহনশীলতা অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গে ভিপি নুর বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কে এমপি হবে সেটা আগে জানার সুযোগ থাকবে না। যার ফলে পেশিশক্তি, কালো টাকার প্রভাব রাজনীতিতে আর থাকবে না। কেন্দ্র দখল করতে যে ভায়োলেন্স হয় সেটাও থাকবে না। অনেকে বলছে, এটা রাজনৈতিক জটিলতা তৈরির জন্য কিংবা নির্বাচন পেছানোর জন্য। তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এই অবস্থান ছিল দলের ঘোষণার সময় থেকে। সে সময় বলেছিলাম, গণপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদের জন্য আমরা গণঅধিকার পরিষদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও আনুপাতিক হারে নির্বাচন চাই।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে নুর বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশি দেশ, তাদের আমরা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে বলে বারবার সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছি। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিটা আমরা বরাবর দেখেছি যে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে। আমরা পরিষ্কার দেখেছি, গত ১৬ বছরে যে বিনা ভোটের নির্বাচন, যেসব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, এমনকি ২০০৮ সালের নির্বাচনেও যে ব্লুপ্রিন্ট হয়েছিল ওয়ানইলেভেনের মাধ্যমে, ২০১৮ সালের আগের রাতের নির্বাচন, ২০২৪ সালের আমিডামির নির্বাচনসবগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে এনডোর্স করেছে আমাদের এই প্রতিবেশি বন্ধুরাষ্ট্র। নুর আরো বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার জন্য তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গত ১৬ বছরে দেখেছি, ফ্যাসিবাদ এবং বাংলাদেশের কোনো কোনো দলকে নির্মূল করার জন্য তাদের রাষ্ট্রীয় পলিসি ছিল ভারতের। বিশেষ করে আপনারা দেখেছেন, ভারতের যে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং তাদের যে আদর্শিক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস, তাদের পলিসি হচ্ছে বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের নির্মূল করা। এটা একদম পরিষ্কার। আমরা আমাদের দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে বসবাস করছি। বাংলাদেশে কার্যত সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির যে উদাহরণ, এটা পৃথিবীর খুব কম দেশে পাবেন।

আলোচনা সভায় বক্তব্যে নুর বলেন, আওয়ামী লীগ আমল থেকে বিএনপিজামায়াতসহ সরকারবিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনসংগ্রাম করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল এক, ফ্যাসিবাদের পতন। ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা আমাদের যার যার রাজনৈতিক লক্ষ্যআদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করছি। আমরা তো বলিনি, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করব। তিনি বলেন, হয়তো আমাদের অনেক বক্তব্য বিএনপির পক্ষে গেছে, জামায়াতের পক্ষে গেছে, চরমোনাইয়ের পক্ষে গেছে। সে ক্ষেত্রে অনেকে হয়তো মনে করেছেন, আমাদের সঙ্গে বোধ হয় বিএনপির জোট হয়েছে, সমঝোতা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন আর জামায়াতের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিলে মনে করেন তাদের সঙ্গে জোট হয়ে গেছে। আমরা আসলে কোনো দলের সাথে জোটে যাচ্ছি না।

সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব মো. জাহিদুল করিম কচি, বৈশাখী টিভির ব্যুরো প্রধান গোলাম মাওলা মুরাদ, সিএমইউজের সাবেক সভাপতি সামশুল হক হায়দরী, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি মুস্তফা নঈম, সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, গণঅধিকার নেত্রী নাসরীন আকতারসহ সাংবাদিক ও গণঅধিকার পরিষদের নেতারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্যাসের সিলিন্ডারবাহী কাভার্ডভ্যানে লিকেজ, আতঙ্ক
পরবর্তী নিবন্ধওরা তো নিষ্পাপ শিশু ছিল