বর্তমান সময়ে যৌতুক এখন ফ্যাশন হিসেবে রূপ ধারণ করেছে। যৌতুক এখন নানাভাবে বিশেষ বিশেষ রূপে দেখা যায়। বড়লোকের যৌতুক, মধ্যবিত্তের যৌতুক ও নিম্ন মধ্যবিত্ত বা গরিবের যৌতুক।
বড়লোকের যৌতুক বলতে আমি মনে করি রাজকীয় ব্যাপার–স্যাপার। নামিদামি শহরের সেরা কমিনিউনিটি সেন্টারে হাজার হাজার মানুষের রকমারি পদের খাবারের সমাহার, উপহার দেয়া নেয়ার রীতি, নান্দনিক ফটোসেশন ইত্যাদি এসবকিছু বড়লোক মেয়ে বাবার শিল্পপতির মুখরোচক কৃষ্টি। যা ছেলের পক্ষ থেকেও থাকে শত ভরি স্বর্ণের সমাহার, মোটা অঙ্কের কাবিনের রেকর্ড। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি আপনি সবাই এদের জাঁকজমক অনুষ্ঠান লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের মাধ্যমেই তুঙ্গে তুলি। এ থেকে আমরা কী শিক্ষা পাচ্ছি? বরং আমরা এদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই আকাশ কুসুম কল্পণার স্বপ্নে বিভোর থাকি। কীভাবে এসব করা যায়!
মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্তের যৌতুক হচ্ছে বড়লোক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এসব রীতিগুলো সামাজিক ও পারিবারিকভাবে রপ্ত করা। কাবিনের অঙ্ক তো আছেই। তাছাড়া কনের পক্ষ থেকে ৫০০/১০০০ বরযাত্রী খাওয়ানো, কানের স্বর্ণ দেয়া, ফার্নিচার দেয়া, সিজেনেবল সব সুস্বাদু খাদ্য সামগ্রী সারা বছর বিতরণ করা, ঈদ–কুরবানে নানাপদের সামগ্রীসহ উপহার প্রদান করা, বাচ্চা হলেতো কথাই নেই। চৌদ্দোগোষ্ঠিকে কাপড় চোপড় দেয়া, দোলনা দেয়া, পান–তেল দেয়া, মিষ্টি দেয়া, আকিকা হলে গরু দেয়া! আর আমরাতো আছিই! গিফট নিয়ে এসব মেয়ের বাবার বরযাত্রী ধরা খাবার খাওয়ার জন্য সবিনয়ে উপস্থিত হওয়াই যেন মুখ্য। যেনো ছেলে থেকে ধরা কাবিনের প্রতিশোধ বিয়ের দিন খাওয়া থেকে শুরু করে একজন মেয়ের ভাই, বাবার সারাবছর নিরব যন্ত্রণা সয়ে যেতে হয়।
যা শুধু ব্যাংকার বলেই নয়; নানা পেশার শিক্ষিত সুশীলরাই এসব করে যাচ্ছে। সামাজিক প্রথা, রীতিনীতি আমাদের সমাজের পাড়া –প্রতিবেশি, মা খালারা এসব বলে বলে পরিবারের মধ্যে যন্ত্রণাদায়ক ইন্ধন ছড়ায়। যার প্রভাব পড়ে সদ্য বিবাহিত বউ হয়ে আসা মেয়েটির ওপর। যা মানসিকভাবে রীতিমতো যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। যার ফলস্বরূপ তারা আত্মহত্যা নামক নির্দয় পথটি বেছে নিতে বাধ্য হয়।
জীবনতো একটাই। তাই যেকোনো সমস্যা সমাধানে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে সমাঝোতা করা, কাউন্সিলিং করা এবং বুঝিয়ে মনকে স্থির করার মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত। আত্মহত্যাতে জীবনের কোনো সমাধান হয়ে উঠে না।
তাই আমার আপনার সকলের উচিত! এসব অপসংস্কৃতি, কৃষ্টি, যৌতুক নামক মরণব্যাধি থেকে বাঁচতে হলে সকলের প্রতিবাদ করা খুবই জরুরি। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নারী পুরুষের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যৌতুক নামক অভিশাপকে নির্মূল করাই সকলের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি।