যে দেশে মাটি বালি পাথর নিরাপদ নয় সে দেশে গণতন্ত্রও অনিরাপদ

স.ম.জাফর উল্লাহ | সোমবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

একটি পশুকে মানুষের পোশাক পরিয়ে দিলে তার স্বভাব চরিত্রে এর কোন প্রতিক্রিয়া যেমন ঘটবে না তেমনি অসভ্য অশিক্ষিত চরিত্রহীন জাতির উপর গণতন্ত্র চাপিয়ে দিলে সে জাতি গণতন্ত্রের সুফল ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কখনো সক্ষম হয় না। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র উশৃঙ্খল বিশৃঙ্খল অবাধ্য অবোধ অকৃতজ্ঞ সভ্যতা বর্জিত গণতন্ত্র চর্চায় অনভ্যস্ত একটি জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ছিল চরম ভুল। সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক শক্তিশালী ভীত ও সমৃদ্ধির বিকাশ ঘটে তখনই যখন রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনে সততা ও দেশপ্রেমের একাত্মা সমীকরণ সমন্বয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। মাছের পচন ধরে মাথা থেকে তেমনি রাজনীতিবিদদের চরিত্রহীনতা সমাজের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে যার প্রভাবে জাতি একটি সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে এবং সর্বত্র ত্রাসের ভয়াবহ আতংক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। স্বাধীনতা মানে ভৌগোলিক একটি রাষ্ট্র নয়। স্বাধীন রাষ্ট্রের মূল স্বত্বাবলি জনগণের মৌলিক অধিকার ৫৪ বছরে ও প্রতিষ্ঠিত হয় নি। রাজনৈতিক দলগুলো পরষ্পর একে অপরকে দোষারোপ করা ছাড়া সুচিন্তিত গঠণমূলক দেশ ও জাতির কল্যাণে ন্যূনতম অবদান রাখতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী প্রত্যেক সরকারই সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে স্বীয় স্বার্থে পরিচালিত করার ফলে গণতন্ত্র ব্যক্তি ও মহল কেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। রাজনৈতিক নানা ঘাত প্রতিঘাত পটপরিবর্তনে আর্দশিক রাজনীতি হয়ে পড়েছে কলুষিত নেতৃত্ব হয়েছে মেধা শূন্য। শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত ভদ্র মার্জিত মেধাবী সমাজে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সজ্জন যোগ্য ব্যক্তির স্‌হলে অযোগ্য ব্যক্তি নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ। রাজনীতি মানে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি দখলবাজি দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ খবরদারি পাহাড় কাটা মাটি বালি বিক্রি লুটপাট খুন গুম অপহরণ মুক্তিপণ আদায় নেতার পরিচয়ে দলের নাম ভাঙিয়ে যত অপকর্ম এসব রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের যোগ্যতার মানদণ্ডে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৫ বছরের দুঃশাসন মুক্ত করতে রাজনৈতিক ভাবে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ জনবিচ্ছিন্ন ও দুর্বল নেতৃত্ব। ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনে সমন্বয়কের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে অপরাজনীতির সংস্কৃতির অবসান সংস্কারের মাধ্যমে নেতৃত্বের আমূলপরিবর্তন জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এমন প্রত্যাশায় শান্তিতে নোবেল প্রাপ্ত ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান করা হয়। বিশ্বে কবি সাহিত্যিক দার্শনিক বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবক আবিষ্কারক অনেক ব্যক্তি রয়েছে তাঁরা স্ব স্ব কাজের জন্য বিখ্যাত তাই বলে তাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা রাখে এমন মনে করার কোন মানে নেই। ড. ইউনূস নোবেল প্রাপ্ত হলেও দেশের প্রেক্ষাপট সামাল দেয়া একক তাঁহার পক্ষে সম্ভব নয় যদি রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের পরিবর্তনের মানসিকতা না রাখে। ক্ষমতায় গেলে কোন দল কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে তা প্রকাশের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর এখন ট্রায়েল পিরিয়ড। প্রত্যেক দলের চরিত্রের খোলস জনসম্মুখে উন্মোচিত হয়ে গেছে রাজনৈতিক দলের প্রভাব ও ছত্রছায়ায় নেতা কর্মীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে জনগণ স্তম্ভিত শঙ্কিত আতংকিত উদ্বেগ উৎকণ্ঠিত তারা কোন দলের উপর আস্থা ও ভরসা রাখতে পারছে না। ক্ষমতার পদ পরিক্রমা বহু দূর এ অবস্থায় দেশের মাটি বালি পাথর রাস্তার রেলিং যেভাবে সাবাড় করছে এতে মনে হচ্ছে তারা অনেক দিনের বুভুক্ষু যা গাজাবাসির বুভুক্ষুতাকে ও হার মানাছে হয়ত ক্ষমতায় গেলে সাগরের পানি ও নিঃশেষ করে ফেলবে। কেউ ভালো একটি পোশাক পরিধান করে রাস্তায় বের হলে সেটা ও খুলে নেওয়ার শঙ্কা বিরাজ করছে জনমনে। ড. ইউনূস সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অসহায় নির্বিকার সংজ্ঞাহীন। অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো স্ব স্ব এলাকায় প্রশাসনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যেভাবে প্রভাব বিস্তার করছে প্রশাসন ও তাদের নির্দেশ মেনে কাজ করছে এতে মনে হচ্ছে তাঁরাই সরকার বা তাদের উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এমন যদি চলতে থাকে তবে ড. ইউনূস সরকারের প্রভাব মুক্ত নির্বাচন মুখ থুবড়ে পড়বে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে জনগণ চরম সন্দিহান। যেহেতু এ সরকারের অঙ্গীকার ছিল সংস্কার বিচার ও নির্বাচন। ড. ইউনূস সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন সিদ্ধান্তে ছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া চলমানের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে সংস্কার ও বিচার ব্যবস্থা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে অথবা ফলাফল অপ্রত্যাশিত থেকে যাবে। লেখক: প্রাবন্ধিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসা
পরবর্তী নিবন্ধস্মরণ : ভাইস এডমিরাল সরওয়ার জাহান নিজাম