এদেশের কিছু কিছু মানুষ গোটা পৃথিবীর ভূত–ভবিষ্যত, ভূগোল–ইতিহাস সব জানে, শুধু নিজের পাকস্থলীর ভূগোলটা জানে না। জমি–জমা, অর্থ–বিত্ত, উপরি পাওয়া–এসবের হিসাবে মানুষ কম্পিউটারকেও হার মানায়, কিন্তু অন্যের অনুষ্ঠানে খেতে বসলে নিজের পাকস্থলীর সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা কতটুকুন, সে হিসাবটা মোটেই করতে পারে না।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিয়ে–শাদির অনুষ্ঠানসমূহে দেখি, অনেকেই বিপুল পরিমাণ খাবার অযথা নষ্ট করেন। পরিবেশিত খাবারের সব আইটেম একসাথে প্লেটে নেবার কি আদৌ কোনো দরকার আছে? পছন্দের এক বা দুটো আইটেম প্লেটে নিন। এগুলো খাওয়া শেষ হলে অন্য আইটেম নিন, অথবা যতটুকু খেতে পারবেন মোটামুটি ততটুকু একসাথে নিন এবং সব চেটেপুটে সুন্দর করে খান। খেতে পারলে আরও নিন, আরো খান। নিজের বাচ্চাদের দিকেও একটু খেয়াল রাখুন।
অন্য কেউ হাঁইতং বা হোস্ট হয়ে আপনার প্লেটে বাড়তি খাবার তুলে দিতে চাইলে তাঁকে বিনয়ের সাথে না করুন। সব আইটেম প্লেটে নিয়ে অর্ধেক খেয়ে, বাকীটা নষ্ট করে উঠে যাবেন– এটা কোন ধরনের ফ্যাশন? আপনি নিজের টাকা দিয়ে কেনা খাবারও এভাবে নষ্ট করতে পারেন না। কারণ, টাকাটা আপনার হলেও এ খাবার উৎপাদন ও তৈরিতে যারা শ্রম দিয়েছেন, ঘাম দিয়েছেন তাদের অবজ্ঞা–অপমান করার কোনো অধিকার আমার–আপনার নেই।
সর্বোপরি এ খাবার তো দেশের সম্পদ। আমি যা খাব না, তা নিশ্চয়ই এ দেশের অন্য কারো না কারো পেটে যাবে। কিন্তু আমি যা নষ্ট করব তার জন্য অন্য একজনকে কম খেয়ে বা না খেয়ে থাকতে হবে। খাবার নষ্ট করা মানে খাদ্যপণ্যের অনর্থক চাহিদা বৃদ্ধি, চাহিদা বৃদ্ধি মানে মূল্যবৃদ্ধি ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। আমার–আপনার অপচয়ের প্রায়শ্চিত্ত যে আমার বা আপনার পরবর্তী প্রজন্মকেই করতে হবে না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? দুর্মূল্যের এ বাজারে পরিমিতিবোধ ও সংযম আমাদের হোক। লেখক : প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, গণিত বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।