যে কারণে ভোগান্তি বাড়ে বন্দরে

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিজিএমইএর চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:০৭ অপরাহ্ণ

বিশ্বমানের কোনো বন্দরে নিয়মটি না থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে এলসিএল কন্টেনার। কয়েকজন আমদানিকারকের পণ্য একই কন্টেনারে বোঝাই করে বন্দরে আনার পর আনস্টাফিং করে ডেলিভারি দেয়ার সিস্টেম চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক গতিশীলতায় সংকট তৈরি করছে। বন্দরের অভ্যন্তরে আনস্টাফিংয়ের জন্য বিস্তৃত জায়গা না থাকার ফলে আমদানিকারকদেরও চরম সংকটে পড়তে হচ্ছে। কোনো জাহাজে এলসিএল কন্টেনারের সংখ্যা দেড়শ টিইইউএসর বেশি হলেই সংকট প্রকট হয়ে উঠে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালের জেটিগুলোতে রপ্তানি পণ্যবোঝাই কন্টেনার রাখার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় রপ্তানি কার্যক্রমে সংকট তৈরি হচ্ছে। বিদ্যমান নানা সংকটের মাঝে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া না হলে দেশের শিল্প উৎপাদন এবং আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের নানা দেশ থেকে পণ্য নিয়ে দুই ধরনের কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এরমধ্যে শুধুমাত্র একজন আমদানিকারকের পণ্য বোঝাই কন্টেনারকে বলা হয় এফসিএল কন্টেনার এবং কয়েকজন আমদানিকারকের পণ্য বোঝাই কন্টেনারকে বলা হয় এলসিএল কন্টেনার। বিশ্বের উন্নত-অনুন্নত সব বন্দরে এফসিএল এবং এলসিএল কন্টেনারে পণ্য পরিবাহিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর উন্নত বন্দরগুলোর ভিতরে এলসিএল কন্টেনার থেকে পণ্য বের করে বিভিন্ন আমদানিকারককে বুঝিয়ে দেয়া হয় না। পুরো কন্টেনার নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওখান থেকে আমদানিকারকেরা নিজেদের পণ্য আনস্টাফিং করে নিয়ে যান। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে এলসিএল কন্টেনারগুলো ইয়ার্ডের ভিতরে খোলা হয়। সব পণ্য বের করে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের সরবরাহ দেয়া হয়। এতে বিশাল জায়গা এবং সময় লাগে। কোনো জাহাজে দেড়শ টিইইউএস এর বেশি এলসিএল কন্টেনার আসলে তা সামাল দিতে বন্দরকে হিমশিম খেতে হয়। একইভাবে এসব কন্টেনার বোঝাই করে পণ্য আনা ব্যবসায়ীদেরও সংকটে পড়তে হয়। এই ধরনের এক একটি কন্টেনার থেকে পণ্য খালাস করতে বাড়তি ৭/৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। অনেক সময় এই দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের প্রভাব পড়ে কারখানায়। কাঁচামাল সংকটে পড়ে কারখানার উৎপাদনও বন্ধ হয়ে পড়ে। শুধু আমদানি পণ্য খালাসেই নয়, রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারের ক্ষেত্রেও সংকট বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারগুলোর শতভাগই আসে বেসরকারি আইসিডি হয়ে। আইসিডি থেকে এসব কন্টেনার এনে জাহাজে বোঝাই করে দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই আইসিডি থেকে কন্টেনারগুলোকে সরাসরি জাহাজের হুক পয়েন্টে নিয়ে আসা হয়। কন্টেনারগুলো আগেভাগে এনে বন্দরের অভ্যন্তরে রাখার ব্যবস্থা করা হলে রপ্তানিপণ্য বোঝাই কন্টেনার জাহাজীকরণ অনেক বেশি গতিশীল হত। বিশেষ করে চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার রাখার মত কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। অবশ্য নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে ১ হাজার এবং জেনারেল কার্গো বার্থ এলাকায় ১৪শ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার রাখার স্লট রয়েছে। চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি) এই ধরনের একটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হলে রপ্তানিকারকদের সুবিধা হত বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন ওয়ান স্টপ সার্ভিস। এখানে লোকবল সংকটে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে বলেও সংশ্লিষ্ট অভিযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেনার খালাস করতে প্রথমে যেতে হয় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে। ওখান থেকে কন্টেনারটির অবস্থান জানানো হয়। কিন্তু লোকবল সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ওয়ান স্টপ সার্ভিস থেকে অধিকাংশ সময়ই কন্টেনারের অবস্থান জানা সম্ভব হয় না। আবার কখনো কখনো অবস্থান বলা হলেও তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী কন্টেনারটি খুঁজে পাওয়া যায় না। জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) প্রায়শ এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এতে আমদানি পণ্য খালাসে অনাহুতভাবে বাড়তি সময় লাগছে। বাড়ছে খরচ। কারখানাগুলোকে নিয়মিত কাঁচামাল সংকটে পড়তে হচ্ছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। চিঠিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য গতিশীল করতে চট্টগ্রাম বন্দরের ডেলিভারি শেড বৃদ্ধি এবং শেডের আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
অবশ্য চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা সংকটের কথা স্বীকার করে বলেছেন, প্রচুর জাহাজ আসছে বন্দরে। কন্টেনারের সংখ্যাও বেড়েছে। বন্দরের প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশের বেশি। এই বাড়তি চাপ সামাল দিতে কিছুটা সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে। পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) চালু হলে এ সমস্যা থাকবে না বলেও তারা উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী কন্টেনার না পাওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু দিনের পর দিন এই সেন্টারই সার্ভিস দিচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে নতুন শনাক্ত ৯৩০ আরও একজনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধশিমু হত্যাকাণ্ড দাম্পত্য কলহের কথাই এসেছে জবানবন্দিতে