যে কারণে বাড়ল মুরগির দাম

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে অস্থির ব্রয়লার মুরগির বাজার। এছাড়া করোনাকালীন লকডাউনের কারণে দীর্ঘ সময় হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। আবার বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরও লাগাম টেনে দেয় সরকার। যার ফলে অনেক খামারী লোকসানের মুখে পড়েন। যে খামারীর ৫ হাজার মুরগি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে, তিনি তা কমিয়ে ৩ হাজারে নিয়ে আসেন। এছাড়া অনেক ছোট ও মাঝারি মানের খামারী ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে খামারই গুটিয়ে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে সরকার লকডাউন তুলে দেয়। একইসাথে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান আগের মতো চালু হয়। ফলে বেড়ে যায় মুরগির চাহিদা। কিন্তু পর্যাপ্ত উৎপাদন না হওয়ায় বাজারে সরবরাহেও সংকট দেখা দেয়।
পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক মাস আগেও মুরগির খাদ্যের দাম ছিল ৫০ কেজি ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়া একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম গত এক মাস আগে ছিল ২৫ টাকা, এখন প্রতিটি বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৫ টাকায়। অন্যদিকে মুরগির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ওষুধের দামও বেড়েছে দ্বিগুণ। এদিকে জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এরমধ্যে বর্তমানে ৩ হাজার ৮০০টি চালু হয়েছে। করোনার অভিঘাতে বন্ধ হয়ে গেছে ১ হাজার ২০০টি। এছাড়া লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৪১৬টি। করোনায় বন্ধ হয়ে গেছে ৮৫টি। অন্যদিকে করোনা শুরুর আগে থেকেই দেশের পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ কমছে। বর্তমানে আমাদের দেশে
সাতটি বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে পাঁচটি ভারতের, একটি থাইল্যান্ডের এবং একটি চীনের। ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে ভিএইচ গ্রুপ, গোদরেজ, সগুনা, টাটা এবং অমৃত গ্রুপ। এছাড়া আছে থাইল্যান্ডের সিপি এবং চীনের নিউহোপ।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার আছে। ব্রয়লার মুরগির মাংসের বার্ষিক উৎপাদন ২০১৬ সালে ছিল ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৭ সালে ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৮ সালে ছিল ৫ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। গত ২০১৯ সালে সেটি দাঁড়ায় ৫ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টনে। এছাড়া গত ২০২০ সালে ছিল সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী।
জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রিটন প্রসাদ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, মুরগির খাদ্য এবং বাচ্চার অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে মূলত বাজার চড়া। এক কেজি ওজনের একটি মুরগির উৎপাদন খরচই লাগছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা মধ্যস্বত্বভোগী বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মুরগি নেন। স্বাভাবিকভাবে তারা কেজিতে ৫-১০ টাকা লাভ করবেন। আসলে মুরগির বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। হ্যাচারি মালিকরা মুরগির খাবারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিলেন। এখানে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ হ্যাচারির সব কাঁচামাল তো দেশে উৎপাদিত হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, মুরগির বাজার বাড়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে বাজার চাহিদা বেড়ে যাওয়া। বর্তমানে বাজারে মুরগির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু খামারীরা সে তুলনায় উৎপাদন করতে পারেননি। করোনার ধাক্কায় অনেকগুলো খামার বন্ধ হয়ে গেছে, এখন ধীরে ধীরে সেইসব খামার চালু হচ্ছে। যেহেতু দাম বাড়ছে অনেকে এখন আগ্রহী হচ্ছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ব্রিডার এসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিবুর রহমান টুটুল বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পোল্ট্রি ফিডের দাম অনেক বেড়ে গেছে। গত বছর যে ভুট্টা প্রতি টন ১৮৫ ডলার দাম ছিল এখন তা ৩৩৭ ডলারে উঠেছে। আবার সয়ামিলের দাম ৩১৫ ডলার থেকে বেড়ে বর্তমানে ৫৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। গত মাসে কিছু ব্যবসায়ী সয়ামিল রপ্তানি শুরু করেন। যার প্রভাবও পড়েছে পোল্ট্রি খাতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় লরির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচ ‘মাতব্বরে’ আটকে রোহিঙ্গা সমস্যা : মোমেন