গত কয়েকদিনের সংঘাত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে আবারো ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের যেভাবে শিক্ষা দিতে হয়, সেটাই এবার বিএনপিকে দেওয়া হবে।
ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে তার এ বক্তব্য আসে। তিনি বলেন, আজকে তারা এখানে ওখানে চোরা পথে গাড়ি পোড়াচ্ছে। যারা গাড়ি পোড়াচ্ছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা এবং তাদেরকে যথাযথ শাস্তি দেওয়া, আর যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, আমার তো মনে হয় যার গাড়ি যেখানে পোড়াবে, যদি ধরা পড়ে, ওই গাড়ি পোড়ানো হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া উচিত। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে, তাছাড়া শিক্ষা হবে না। তাদের শিক্ষাটা ওইভাবেই করতে হবে। শঠদের সাথে শঠের মতোই করতে হবে। তার আচরণের জন্য ঐরকমই শিক্ষা দিতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
গত শনিবার বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘাতে হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং তারপর হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি–জামায়াত জোট, এরা আসলে যে সন্ত্রাসী এবং বিএনপি যে একটা সন্ত্রাসী দল এটা তারা পুনরায় প্রমাণ করল। কানাডা কোর্ট কিন্তু এ বিষয়টা কয়েকবার বলেছে। এখান থেকে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যারা আশ্রয় চেয়েছিল, তারা সেখানে কিন্তু পায়নি, সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই। এদের সাথে আমরা যতই ভালো ব্যবহার করি না কেন, এদের কখনোই স্বভাব বদলাবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এরা বিশ্বাস করে। কারণ অবৈধভাবে অস্ত্র হাতে ক্ষমতা দখলকারীর হাতেই তাদের জন্ম। এটাই তারা ভালো বোঝে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমার যেটা ধারণা, এরা তো নির্বাচন চায় না, এরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন, ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আজকে ২০২৩ সাল, এই বাংলাদেশ তো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। অস্বীকার করতে পারবেন না। আজকে আনাদের কাছে কেউ ভিক্ষা চাইতে আসবে না। প্রত্যেকের খাবারের ব্যবস্থা, ভূমিহীনদের ভূমির ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা। কেউ কাজ করলেই কিন্তু খেতে পায়, অন্তত সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। তারা নানাভাবে, আসলে মানুষকে কষ্ট দেওয়াটাই তাদের চরিত্র। এখানে আমার বলার কিছু নেই। আন্তর্জাতিকভাবে সবাই আমাদের প্রসংশা করে, একমাত্র দুঃখে মরে যায় এই বিএনপি আর জামায়াত জোট, এরাই।
তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন, সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে সেই শিক্ষাটাই এখন আমাদের দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেটাই আমরা দেব। কারণ এদের জন্য এই দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা যাবে না।
২০১৪–১৫ সালে বিএনপি–জামায়াতের টানা হরতাল–অবরোধে যে সহিংসতা হয়েছিল, তার সঙ্গে গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহের তুলনা করে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যারা এসব সহিংসতা করছে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে কিনা। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিন্দিতে একটা কথা আছে না, শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ। যে শঠ, তার সাথে শঠের মতোই আচরণ করতে হবে। আর যার যার নিজের কাজ নিজেরই। যারা জ্ঞানী, তারা নিজের কাজ নিজেই করে যায়। শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ– আমার কথা হচ্ছে সেটাই।
যারা জ্বালাও–পোড়াও করছে, তারা সেসব বন্ধ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বন্ধ না করলে পরে এর পরিণতি তাদের ভোগ করতে হবে। এবার এমনি এমনি যেতে দেব না। নির্বাচন এভাবে তারা থামাতে পারবে না। ২০১৩ সালেও পারেনি, ১৮–তেও পারেনি। এবারও পারবে না। ইনশাল্লাহ নির্বাচন যথাসময়েই হবে, তারা পারবে না। তবে জনগণ আমাদের সাথে আছে। কোনো জনগণ তাদের সাথে নাই। জনগণকে কষ্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না, রাজনীতি তো জনগণের জন্য। এটা তারা ভুলে যায়, তারা তো অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় আসার অভ্যাস।
সহিংসতায় বিএনপি থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, মাঝখানে তারা কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছিল, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা কিন্তু দেওয়া হয়নি। তাদের উপর একটাই শর্ত ছিল, তারা কোনো ধরনের অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এগুলো করবে না। তারা যখন সুস্থভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল, তাতে কিন্তু তাদের প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করা শুরু করেছিল। ২৮ তারিখ বিএনপি যে সমস্ত ঘটনা ঘটাল, বিশেষ করে পুলিশকে হত্যা করেছে, মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপালো, সাংবাদিককে ধরে পিটানো, মারা, এ ধরনের ঘটনার পরে জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না। শুধু তাই না, পুলিশকে তো মেরেছেই, তারপরে আবার হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানে আবার পুলিশের ওপর আক্রমণ। আজকে আপনারা দেখেন, ইসরায়েল প্যালেস্টাইনে যেভাবে হামলা করেছে, সেখানেও হাসপাতালে তারা বোমা হামলা করল, নারী–শিশুদের হত্যা করেছে, সেখানে তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখেছে। আমি তো তফাৎ কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, নিজেরা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেরাই আবার পালাল। পালিয়ে গিয়ে আবার অবরোধের ডাক। কিসের অবরোধ, কার জন্য অবরোধ? যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সারা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করছে, তখন তাদের কাজটাই হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, বাংলাদেশে এমন অবস্থা তৈরি করা যে, বাংলাদেশে কিছুই হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যেদিন চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলে উদ্বোধন করলেন, সেদিনই তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে, মানুষ খুন করেছে। তাদের হামলায় একটা জিনিস লক্ষ্যণীয় যে, একদিকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর হচ্ছে সাংবাদিক, এদের ওপরই কিন্তু হামলাটা চালিয়েছে। সেগুলো কারা কারা তাদের নাম ধাম আর যা কিছু করেছে প্রকাশ্যেই করেছে। এবং গাড়ি পোড়ানো, গতকালকেও লালমনিরহাটে যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা, মানুষের সম্পদ নষ্ট করা, আর সন্ত্রাসী, এটাই তো তাদের চরিত্র।
সাংবাদিকের ওপর কিসের রাগ, সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের উপরে যেভাবে তারা চড়াও হলো, কেন তাদের ওপর হঠাৎ, সাংবাদিকরা তো তাদের খুব ভালো ভালো নিউজ দিচ্ছিল। টকশোতেও ভালো ভালো কথা আর সরকারের দোষটাই বেশি দেখে, তাহলে সাংবাদিকদের ওপর এত রাগটা কেন? সেটা আমি বুঝতে পারলাম না। প্রত্যেকটা টেলিভিশন প্রাইভেট সেক্টরে আমিই দিয়েছি, সব জায়গায় তাদের নিউজটাই কিন্তু সবার আগে, বরং আমার নিউজটাই সবার পরে। কোনো কোনো টেলিভিশনে আমি চার–পাঁচ নম্বরে থাকি। তারপরেও রাগটা কেনো হলো? তবে এই ঘটনার নিন্দা করি, এইভাবে অত্যাচার করা। সাথে সাথে আমাদের নেতাকর্মীরা প্রত্যেকে হাসপাতালে হাসপাতালে গেছে, দেখেছে, চিকিৎসাসেবা যা লাগে আমরা অবশ্যই দেখব।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে তারা এই একই রকম অগ্নিসন্ত্রাস করে, ১৪–১৫ তিনটা বছর ধরে তারা এই অগ্নিসন্ত্রাস করে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিক, সবাইকে আমরা আর্থিক সহযোগিতা দিতাম, যাতে তাদের বাসটা চালাতে পারে। যারা আহত নিহত, তাদের আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।
তিনি বলেন, ঠিক একইভাবে পুলিশকে আঘাত করে করে সেই রাজশাহীতে পুলিশকে মারল, গাইবান্ধাতে মারল। সারা বাংলাদেশেই মারল, সেই সময় ২৯ জন পুলিশকে মারল, পাঁচশর উপর স্কুলঘর পুড়িয়েছিল। ৩৮২৫টি গাড়ি পুড়িয়ে ছিল, ৩ হাজার মানুষকে পুড়িয়েছিল। ৫০০ মানুষ পুড়েই মারা যায়। এখন অনেকে পোড়া অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।