যেভাবে মৃত্যু হচ্ছে একটি পুকুরের

দেড় কানির পুকুরটি এখন ১০ গণ্ডায় এসে ঠেকেছে।। ময়লা আবর্জনায় দিনদুপুরে করা হচ্ছে ভরাট।। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

উত্তর পাহাড়তলী নোয়াপাড়া হাজী আমানউল্ল্যাহ রোডের শত বছরের ছন্দনা পুকুরটি (নোয়াপাড়া পুকুর) এখন বিলুপ্তির পথে। স্থানীয়দের অভিযোগ মসজিদের ওয়াকফ এস্টেটের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি দিনদুপুরে ময়লা আবর্জনায় ভরাট করা হলেও কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করছে না।

এতো বড় পুকুরটি নিয়ে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ, ফায়ার সার্ভিস, সিডিএ, স্থানীয় কাউন্সিলর কারো পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নারীপুরুষবৃদ্ধ সকলেই। বর্তমানে এই পুকুরটি যারা ক্রয় করেছেন তারা গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে পলাতক থাকলেও প্রতিনিয়ত ময়লাআবর্জনা ফেলা কিন্তু অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিনে পুকুরটি দেখতে গেলে স্থানীয় অসংখ্য নারীপুরুষ এসময় ভিড় করেন এবং তাদের অভিযোগের কথা আজাদীতে তুলে ধরার অনুরোধ জানান। তাদের অভিযোগ স্থানীয় মাহমুদ খান জামে মসজিদের ওয়াকফ এস্টেটের এই পুকুরটির এক সময় আয়তন ছিল দেড় কানির মতো। এখন চারদিকে ভরাট করে পাকাসেমিপাকা বিল্ডিং, দোকান এবং টং দোকান করার ফলে এটির আয়তন এখন ১০ গণ্ডায় এসে ঠেকেছে বলে দাবি করেছেন ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং সালমা আক্তার। এসময় মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, এই পুকুরটি আমার জন্মের অনেক আগের। আমাদের বাপদাদাদের কাছ থেকে শুনেছি এই পুকুরটি প্রায় দেড় কানি আয়তনের। এখানে আমাদের বাপদাদারা গোসল করেছেন। আমরা গোসল করেছি। এখন চারদিকে ময়লাআবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে। দীর্ঘদিন পুকুরটি ব্যবহার করতে না পারার কারণে পুকুরটির মাঝখানে ঘাস লতাপাতা গজিয়েছে। যে কেউ হঠাৎ দেখলে এটিকে পুকুর বলে মনে হবে না। তিনি বলেন, এটি মাহমুদ খান জামে মসজিদের ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি। যারা মোতোয়াল্লী ছিলেনতারা ওয়াকফ এস্টেটের শ্রেণি পরিবর্তন করে এই সম্পত্তিগুলো বিক্রি করেছেন। এটা এখন কয়েক হাত পরিবর্তন হয়েছে। পুকুরের দক্ষিণপশ্চিম পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা সালমা আক্তার এবং রাবেয়া বশরী হাতজোড় করে বলেন, আমাদেরকে বাঁচান; বিল্ডিংয়ের সামনে এমন ময়লাআবর্জনার দুর্গন্ধে আমরা এখানে বসবাস করতে পারছি না। আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছি না; ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিতে পারছি না, দরজাজানালা খুলতে পারছি না দুর্গন্ধের কারণে। দিনরাত ময়লা ফেলে চারদিক ভরাট করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সালমা আক্তার আরও বলেন, আমার জন্ম এখানে; এই পুকুরটা এক সময় সবাই ব্যবহার করতো। এখন ময়লাআবর্জনা ফেলে ভরাট করা হলেও কেউ কিছু বলছেন না। এটা ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি। কী ভাবে বিক্রি করেছে আমরা জানি না।

পুকুর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা গৃহিনী রাবেয়া বশরী অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সবাইকে বলেছি; মেয়র সাহেবকেও বলেছিএখানে ময়লা না ফেলার জন্য সাইনবোর্ড লিখে দেয়ার জন্য। মেয়র সাহেব এসেও বলেছেন, এখানে ময়লা না ফেলার জন্য। তারা কারো কথা শুনেন না। দিনরাত এই খোলা জায়গায় ময়লা ফেলে পুকুরটি কৌশলে ভরাট করা হচ্ছে। যারা কিনেছেনতাদেরকে আমরা বলেছিআপনারা ঘেরাও দিয়ে দেন; এখানে ময়লা না ফেলার জন্য সাইবোর্ড দিয়ে দেন। কিন্তু কেউ শুনছেন না আমাদের কথা।

এই পুকুরে দীর্ঘ ১৮১৯ বছর গোসল করেছেন জানিয়ে হাজী আমানউল্ল্যাহ রোডের এই পুকুর পাড়ের অস্থায়ী বাসিন্দা চটপটিফুচকা বিক্রেতা মো: জামাল উদ্দিন বলেন, এই এলাকায় প্রায় ৩০ বছর ধরে আছি। আমি এই পুকুরে গোসল করেছি। দেখতে দেখতে পুকুরটি চোখের সামনে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি।

এই ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক সোনিয়া সুলতানা আজাদীকে জানান, এই ধরনের পুকুর ভরাট করা নিয়ে গত সপ্তাহেও আমরা তিনটি মামলা করেছি। নগরীতে অবৈধ ভাবে পুকুর ভরাট করা আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা যেগুলোর মামলা করছি এগুলোর বেশ কয়েকটির শুনানি হয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিডিএ চেয়ারম্যান স্যারকেও আমরা চিঠি দিয়েছিযাতে পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করে কেউ সিডিএর প্ল্যানের জন্য আবেদন করলে প্ল্যান দেয়া না হয়। সিডিএর চেয়ারম্যান স্যারও বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছেন। এবার সিডিএর কমিটিতে চেয়ারম্যান স্যার আমাদেরকেও রেখেছেন। আমরা বিষয়টি কঠোর ভাবে দেখবোযাতে কেউ পুকুর ভরাট করে সিডিএর প্ল্যানের জন্য দিলেও প্ল্যান না পায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক সোনিয়া সুলতানা বলেন, আসলে সাধারণ মানুষ যেটা আমাদের থেকে প্রত্যাশা করে সেটা কিন্তু আমরা করতে পারি না; আমরা চাইলে ভরাট করা পুকুরটি খনন করে দিতে পারি না। আমরা এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে মামলা করতে পারি এবং জরিমানা করতে পারি। পাহাড়তলীর এই পুকুরটির ব্যাপারেও আমরা ব্যবস্থা নেবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন হাসিনা
পরবর্তী নিবন্ধসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়াতে নতুন পে কমিশন