যেভাবেই হোক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে

| রবিবার , ৯ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজার নতুন শিশুর জন্ম হচ্ছে। এই নতুন শিশুর জন্মের কারণে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বছর বছর বেড়ে চলেছে। কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি মাদক, মানব ও অস্ত্র পাচারের কারণে নানা ধরনের নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করছে। এ সমস্যা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেনি, তবে এটা ক্রমেই আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে না।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের যে কোনো উদ্যোগে পাশে থেকে সমর্থন ও সহায়তা প্রদানের বিষয়ে সৌদি আরব, ইরান, প্যালেস্টাইন, তুরস্ক, কাতার, কুয়েত ও চীন তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। জিসিসি প্লাস ফোরামের সভায় বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা প্রদানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে সমপ্রসারিত সাময়িক আবাসন তৈরিতে বাংলাদেশ এই বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। জুনে অনুষ্ঠিত নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেনেভাভিত্তিক সেন্টার ফর হিউম্যানিটারিয়ান ডায়ালগ আয়োজিত ‘অসলো ফোরাম’ সম্মেলনে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারে সশস্ত্র সংঘাতের অবসানের জন্য আসিয়ানসহ আঞ্চলিক দেশগুলোর সক্রিয় ভূমিকা আশা করেছে।

এবিষয়ে ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন তাঁর এক লেখায় বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘ ও দাতা সংস্থাগুলো ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। জাপান রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের খাদ্য সহায়তার জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে (ডব্লিউএফপি) ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি এবং জাপান এঙটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন উভয়েরই মিয়ানমারে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। জাপান বে অফ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্টের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, জ্বালানি খাত এবং যোগাযোগ খাতে আর্থিক প্রতিশ্রুতি বাড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে মিয়ানমারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনর্বাসন প্রকল্পেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। জাপান মিয়ানমারের রাজনীতিতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাপান সরকার মিয়ানমারকে ২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্য ও উন্নয়ন তহবিল দিয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকট জাপানের জন্য একটি হুমকি এবং এ সংকট সমাধানে জাপান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো লিখেছেন, প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৌশলগত গুরুত্বের কারণে দেশটির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারছে না। চীন, জাপান, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক বেশ ভালো। মিয়ানমার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক জোট আসিয়ানের সদস্য এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গেও মিয়ানমারের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আসিয়ান জোট মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক কারণে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আসিয়ান এ অঞ্চলের সবচেয়ে কার্যকর অর্থনৈতিক জোট, আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর মিয়ানমারে শীর্ষ বিনিয়োগকারী। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৪০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ মিয়ানমারে বিদেশি বিনিয়োগের প্রায় একচতুর্থাংশ সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ।

বলা অত্যাবশ্যক যে, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। তারা এখন বিশ্বের জন্যও হুমকি। রোহিঙ্গাদের যদি দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া না হয় এ সমস্যা আরও বাড়তে থাকবে। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন দেশ এই সমস্যা জিইয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব সত্ত্বেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে না দিয়ে তাদের ওপর মানসিক নির্যাতন করছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের নিরাপত্তা আজ ঝুঁকিতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষা ও বাংলাদেশের পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন জরুরি। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে যে মানবিকতা ও বদান্যতা দেখিয়েছেন তা বিশ্ববাসীর কাছে একটি উদাহরণ। বিশ্বদরবারে সব মহলে প্রশংসিত হয়ে তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হলে দফায় দফায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্রয় দেন। আয়তনে ক্ষুদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার পরেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজারে আশ্রয় দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সহায়তায় তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকার নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তাদের প্রত্যাবাসন জরুরি হয়ে পড়েছে। যেভাবেই হোক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে