যেকোনো স্থিতিশীল সমাজের অন্যতম শর্ত জননিরাপত্তা

| বুধবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

গত বেশ কিছুদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে এবং এর পরিসর বিস্তৃত হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কোনো কোনো নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেই সুযোগসন্ধানী অপরাধীচক্র এর ফায়দা লুটছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমন্বয়ক পরিচয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। একই দিন ভিন্ন আরেকটি প্রতিবেদনে জানা গেছেরাস্তায় তো বটেই, এমনকি বাসাবাড়িতে পর্যন্ত গিয়ে চাঁদাবাজরা চাঁদা দাবি করছে। সমপ্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির বার্তা জনমনে চরম উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করে। সেখানে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে যৌথ অভিযানে ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হলেও জনমনে অস্বস্তিউৎকণ্ঠা রয়েই গেছে। সংবাদমাধ্যমে আরও প্রকাশ, প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুনখারাবির পাশাপাশি জননিরাপত্তাহানিজনিত অনেক ঘটনা ঘটলেও সবই সংবাদমাধ্যমেও উঠে আসছে না।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুনখারাবি, ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, হামলাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বার্তা প্রায় প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে। পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, শুধু এক মাসে সারা দেশে অন্তত ৯০ জন খুন হয়েছেন। গণপিটুনির মতো চরম নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত ঘটনাও গত দুই মাসে কম ঘটেনি। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পথে চলতে এখন পদে পদে ভয় পায় মানুষএও সংবাদমাধ্যমেরই বার্তা। তবে স্বস্তির খবর হলো, সেনাবাহিনীসহ প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী সতর্ক নজরদারি বাড়িয়েছে এবং অপরাধ ও অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করেছে। আমরা তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই, কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে কিংবা জননিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হলে মানবাধিকারে অভিঘাত লাগে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে মানবাধিকারে আঘাত লাগে তা অনস্বীকার্য। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এ সরকারের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অর্থাৎ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুনডাকাতিছিনতাইসহ বহুমাত্রিক দুষ্কর্মের পরিসর ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক সরকারের শাসনামলে যে বিষয়গুলো ক্ষতের ওপর ক্ষত সৃষ্টি করছিল এর অন্যতম জননিরাপত্তাহীনতা। জুলাইঅগাস্টের অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকালে অন্তত এর পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু এই প্রত্যাশা হোঁচট খেয়েছে। মব জাস্টিসবাড়তে থাকল এবং তা সঙ্গত কারণেই নানা প্রশ্নও দাঁড়াল।

তাঁরা বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, কারণ ও করণীয় দিকনির্দেশনা প্রত্যেকটি বিষয় সমান্তরালে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের উৎসে নজর দিতে হবে যথাযথ প্রতিবিধান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে। একই সঙ্গে এই সত্যও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, অপরাধী যত কৌশলই অবলম্বন করুক না কেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তাদের ধরা পড়তেই হবে এবং বিচারে প্রাপ্য দণ্ডটুকুও ভোগ করতে হবে। এ ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকানোর পাশাপাশি জনমনে শান্তি ফেরানোর পথ অনেকটাই কণ্টকমুক্ত হবে, শান্তিপ্রিয়দের এই প্রত্যাশায় যাতে চির না ধরে তা নিশ্চিত করার দায় সরকারেরই।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, যে কোনো স্থিতিশীল সমাজের অন্যতম শর্ত জননিরাপত্তা। টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও জননিরাপত্তার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। জননিরাপত্তাসামাজিক শৃঙ্খলা এবং প্রাতিষ্ঠানিকঅপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নিয়মনীতির যথাযথ প্রতিপালন ইত্যাদি জরুরি বিষয় হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অপরাধ সমাজের অন্যতম গুরুতর ব্যাধি এবং এই ব্যাধি উন্নয়নঅগ্রগতির অন্যতম প্রতিবন্ধক। স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে এ রকম তিক্ত অভিজ্ঞতা ইতঃপূর্বে আমাদের সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজে অপরাধ বৃদ্ধির মতো উদ্বেগজনক পরিস্থিতির উদ্ভব কিংবা জিইয়ে থাকা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।

তাঁরা বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। আমরা জানি, বিদায়ী সরকারের সময় পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনআস্থা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু ওই সরকারের পদত্যাগের পর পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে এবং বাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে ইতোমধ্যে। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কাঠামো কার্যকর করা গেলেও মাঠ পর্যায়ে পুলিশকে পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। জনগণের ভীতি দূর করে জনগণের সেবা করা পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল। যে কারণে হোক বর্তমানে পুলিশের ভেতর যে ভয় ঢুকেছে, তা দূর করতে হবে। এই আস্থা অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে