থেরবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস বিনয়ের একটি অংশ। সাংঘিক জীবনের সাথে ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রতি বছর শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে আশ্বিনী পূর্ণিমা অবধি এই তিন মাস ভিক্ষুসংঘরা বিহারে বর্ষাবাস অধিষ্ঠান করেন।
আজ হতে আড়াই হাজার বছর পূর্বে মহাকারুণিক তথাগত বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘকে বর্ষাবাস অধিষ্ঠানের বিনয় প্রজ্ঞাপন করেন। এই সময় হতে তিন মাস পর্যন্ত উপাসক-উপাসিকারা উপোসথ তিথিতে অষ্টাঙ্গপোসথ শীল গ্রহণের মাধ্যমে ত্যাগময় চেতনার মধ্য দিয়ে আত্মপরিশুদ্ধিময় জীবন গঠনের লক্ষ্যে ধ্যানানুশীলনে রত হন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরস্থ বাংলাদেশী বৌদ্ধদের ধর্মানুশীল জীবনযাপনের বৌদ্ধিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ধর্মচক্র বুড্ডিষ্ট মোনাস্ট্রি এন্ড মেডিটেশন সেন্টারে বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে বুদ্ধের প্রথম ধর্মোপদেশ-পবিত্র ধর্মচক্র প্রবর্তনসূত্র অবিরত চব্বিশ ঘণ্টা (দিন-রাত) পাঠ করা হয় যা যুক্তরাষ্ট্রের মত পাশ্চাত্য দেশে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
পবিত্র শুভ আষাঢ়ী পূর্নিমাকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টায় ‘আষাঢ়ী পূর্ণিমার তাৎপর্য’ শীর্ষক ধর্মদেশনা, শীল প্রদান, বুদ্ধ ও সীবলী পূজা, গুরু আচারিয় পূজা, ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান করা হয়।
আষাঢ়ী পূর্ণিমার গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে ধর্মদেশনা প্রদান করেন ইন্টারন্যাশনাল ধর্মচক্র বুড্ডিষ্ট মোনাস্ট্রি এন্ড মেডিটেশন সেন্টারের অধ্যক্ষ ও পরিচালক ভদন্ত ফ্রা মহা নিরোধা ভিক্ষু।
ভদন্ত ফ্রা মহা নিরোধা বলেন, “ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস হচ্ছে ভিক্ষুসংঘ ও গৃহী সংঘের ধর্মীয় জীবনাদর্শের মধ্য দিয়ে স্বীয় জীবনকে শীল-সমাধি-প্রজ্ঞা ও দান, শীল ভাবনায় রত থাকা।”
তিনি অষ্টাঙ্গপোসথধারী উপাসক-উপাসিকা ও গৃহীদের উদ্দেশে বলেন, “আজ থেকে তিন মাসের জন্যে দান-শীল-ভাবনা অনুশীলনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধিতার চেষ্টা করবেন।”
অনুষ্ঠানের শেষে সেন্টারের দায়ক-দায়িকার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু সংঘরাজ কর্তৃক শাসনজ্যোতি অভিধায় ভূষিত দানবীর তপন চৌধুরী।
তিনি বোস্টনস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির সবাইকে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে বলেন, “আমরা পাশ্চাত্য দেশে থাকলেও মহামতি বুদ্ধের জীবনাদর্শনকে ভুলিনি। তাই শত ব্যস্ততা এবং এমন মহামারীর মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বিহারে আসতে দেখে আমি খুবই আনন্দানুভব করছি।”
তিনি বোস্টনের বৌদ্ধদের ভবিষ্যত প্রজন্ম বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশন যেন স্বকীয় ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে বৌদ্ধিক জীবনাদর্শনে জীবন গঠন করে সেই ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করার জন্য স্ব-স্ব মাতা পিতাকে একটু যত্নশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে সেন্টারের বিশেষ আকর্ষণ ছিল মহামতি বুদ্ধের প্রথম ধর্মোপদেশ পবিত্র ধর্মচক্র প্রবর্তনসূত্র পাঠ।
সন্ধ্যা ৭টায় মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ভদন্ত ফ্রা মহা নিরোধা ভান্তের পরিচালনায় পবিত্র ধর্মচক্র প্রবর্তনসূত্রপাঠ আরম্ভ হয়।
পবিত্র সূত্রপাঠ করার জন্য দু’টি ধর্মাসন রাখা হয়। একক ও দ্বৈতভাবে ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা হতে ২৫ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিট পর্যন্ত অবিরত ২৪ ঘন্টা সূত্রপাঠ করা হয়।
পবিত্র সূত্রপাঠে অংশগ্রহণ করেন মাশৈশিং মার্মা, অনিতা বডুয়া, তপন চৌধুরী, শর্মিলা চৌধুরী, তপন কুমার সিংহ, মন্জু বডুয়া, রাতুল বডুয়া, রাজু বডুয়া, দেবাশীষ বডুয়া, সুমিত বডুয়া, পৌলমী বডুয়া, টুটুল বডুয়া, তনুশ্রী বডুয়া, টিংকু বডুয়া, আর্য্যশ্রী বডুয়া, পিনু বডুয়া ও শর্মি বডুয়া (মৌ) প্রমুখ।