টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটটা যে তারা বেশ ভালই রপ্ত করেছে তার প্রমাণ দিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যে দেশে ফুটবলের মত জনপ্রিয় খেলা অনেক পেছনে সে দেশ কিনা ক্রিকেটে এতটাই দক্ষ। বিশ্বকাপ আয়োজন করতে মাত্র পাঁচ মাসে স্টেডিয়াম বানিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপের মাঠের লড়াইয়েও তাক লাগিয়ে দিল। বাংলাদেশকে হারিয়ে যে সিরিজ জিতেছিল সেটা যে কোন অঘটন ছিলনা সেটা প্রমাণ করতে মোটেও সময় নেয়নি দলটি। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ঐতিহাসিক এক জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিকরা। কানাডাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল যুক্তরাষ্ট্র। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটটা কিভাবে খেলতে হয় তা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অ্যারন জোন্স। ডালাসের গ্রান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে জোন্সের ৪০ বলে ৯৪ রানের ঝড়ে ১৯৫ রানের লক্ষ্য ১৪ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয় আছে আর মাত্র দুটি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ২৩০ রান ও ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০৬ রান তাড়া করে জিতেছিল। শুধু তাই নয় আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। গত এপ্রিলে কানাডার বিপক্ষে ১৬৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪ উইকেটে জিতেছিল তারা। বিশ্বকাপে কোনো আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশের এটিই সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। প্রথম ইনিংসে নেদারল্যান্ডসের ২০১৪ সালে ১৯৩ রান টপকে রেকর্ডটি নিজেদের করেছিল কানাডা। ঘণ্টা দুইয়ের ব্যবধানে তা কেড়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। স্বাগতিকদের রেকর্ড গড়া জয়ের মূল কারিগর জোন্স। ৪০ বলের ইনিংসে ৪টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন ১০টি ছক্কা। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি ছক্কা শুধু ক্রিস গেইলের। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ১১টি ছক্কা মেরেছিলেন। জোন্সকে দারুণ সঙ্গ দেন আন্দ্রিয়েস হাউস। ৪৬ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ৪২ রানে ২ উইকেট পড়ার পর মাত্র ৫৮ বলে ১৩১ রানের জুটি গড়েন হাউস ও জোন্স। দুজনের সম্মিলিত তান্ডবে জয়ের জন্য ৭২ বলে ১৪৭ রানের সমীকরণকে ৩০ বলে ২৭ রানে নামিয়ে আনেন তারা দুজন। যে কোনো উইকেটে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ রানের জুটি। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তৃতীয় উইকেটে এর চেয়ে বড় জুটি আছে আর একটি। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেলস ও ওয়েন মরগ্যান করেছিলেন ১৫২ রান। যদিও বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই স্টিভেন টেইলরের উইকেট হারায় যুক্তরাষ্ট্র। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর ১৬ বলে ১৬ রান করে ফিরেন আরেক ওপেনার মোনাঙ্ক প্যাটেল। ৮ ওভারে স্বাগতিকদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৪৮ রান। সেখান থেকেই শুরু হাউস ও জোন্সের ঝড়। পরের ৬ ওভারে আসে যথাক্রমে ১৯, ১৪, ১০, ১৫, ২০ ও ৩৩ রান। চাপের মুখে পাল্টা আক্রমণে ছয় ওভারে ১১১ রান নেন হাউস ও জোন্স। পুরোপুরি বদলে যায় ম্যাচের গতিবিধি। নবম ওভারে প্রথম আক্রমণে এসে প্রথম ডেলিভারি ‘নো‘ বল করেন নিখিল। ফ্রি হিটে করেন ওয়াইড বল। বৈধ ফ্রি হিট বলে ছক্কা মারেন হাউস। দুই বল পর আরেকটি ছক্কা মারেন জোন্স। এরপর আর থামাথামি নেই। প্রতি ওভারে ছক্কা মারতে থাকেন দুই ব্যাটসম্যান। ত্রয়োদশ ওভারে কানাডা অধিনায়ক সাদ বিন জাফরের বলে ৩টি ছক্কা মারেন জোন্স। মাত্র ২২ বলে পৌঁছে যান পঞ্চাশে। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে যা দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। সবচেয়ে বেশি তন্ডব বয়ে যায় জেরেমি গর্ডনের ওপর। চতুর্দশ ওভারে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩৩ রান দেন তিনি। ওভারের তৃতীয় বলে হাউসকে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচে পরিণত করেন গর্ডন। কিন্তু ‘নো’ বল হওয়ায় বেঁচে যান আগের বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া হাউস। সব মিলিয়ে ওই ওভারে ১১টি বল করেন গর্ডন। বিশ্বকাপে এক ওভারে এর চেয়ে বেশি রান খরচের রেকর্ড শুধু স্টুয়ার্ট ব্রডের। ২০০৭ বিশ্বকাপে ইংলিশ পেসারের বলে ছয় ছক্কায় ৩৬ রান নেন ভারতের যুবরাজ সিং। শেষ পর্যন্ত এ জুটি ভাঙলেও অবশ্য তাতে কোনো লাভ হয়নি কানাডার। শেষ পর্যন্ত ছক্কা মেরেই ম্যাচ শেষ করেন জোন্স।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৩ রান পায় কানাডা। ১৬ বলে ২৩ রান করে ফিরেন জনসন। তিন নম্বরে নেমে পারগাত সিং টিকতে পারেননি। তৃতীয় উইকেটে নিকোলাস কার্টনকে নিয়ে ৩৭ বলে ৬২ রানের জুটি গড়ে তোলেন ধালিওয়াল। আর তাতেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় কানাডা। ১৫তম ওভারে কোরি অ্যান্ডারসনের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন ৪৪ বলে ৬১ রান করা ধালিওয়াল। তিনি ৬টি চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন। এরপর দলকে দেড়শ পার করিয়ে থামেন কার্টন। টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। করেন ৩৩ বলে ৩টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৫১ রান । শেষ দিকে দুটি করে চার–ছক্কায় ১৬ বলে ৩২ রান করেন মোভা। আর তাতেইড ১৯৪ রানের বিশাল স্কোর গড়ে কানাডা।
