যুক্তরাজ্যে সালমানের ছেলে-ভাতিজার দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

স্বাগত জানাল টিআইবি

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৫ মে, ২০২৫ at ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি পরিবারের দুই সদস্যের প্রায় ৯ কোটি পাউন্ড বা ১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল সম্পদ জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের গুরুতর এবং সংগঠিত অপরাধ দমন বিষয়ক সংস্থা। সরকারি নথিপত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ক্ষমতা হারানো বাংলাদেশের সাবেক শাসকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পদের অনুসন্ধানে সহায়তা দিতে যুক্তরাজ্যের ওপর চাপ বাড়তে থাকার মধ্যেই দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সম্পদ জব্দের নয়টি আদেশ দিয়েছে। এসব আদেশের মধ্যে রয়েছে আহমেদ শায়ান এফ রহমান এবং তার চাচাত ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না। জব্দ করা সম্পদের মধ্যে লন্ডনের গ্রভেনর স্কয়ারে অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ যাদের যুক্তরাজ্যে সম্পদ রয়েছে, তা নিয়ে গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে এই দুজনের নাম পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে শায়ান হচ্ছেন শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে আর শাহরিয়ার সালমানের ভাতিজা। খবর বিডিনিউজের।

এদিকে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদের বিষযে যুক্তরাজ্যের এনসিএর নেওয়া প্রথম পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য দেশেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে আত্মগোপেনে ছিলেন সালমান এফ রহমান। পরে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে। আর কাগুজে কোম্পানি খুলে লন্ডনে টাকা পাচার এবং ঋণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

১৩ মার্চ দায়ের করা ওই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ৭৬ কোটি টাকা পাচার এবং ব্যাংক ঋণের ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে; যাতে মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মকর্তা সাতজন। এর আগে দুদকের আবেদনে আদালত গত ১০ মার্চ সালমান ও তার ছেলে শায়ানের নামে লন্ডনে থাকা দুটি বাড়ি জব্দের আদেশ দেয়। সব শেষ দুদিন আগে শায়ান রহমানের লন্ডনের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট অবরুদ্ধের আদেশ পায় যুক্তরাজ্যের এনসিএ।

ফিনানশিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দুই সম্পত্তির মধ্যে লন্ডনের গ্রভেনর স্কয়ারে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ২০১০ সালে ৬৫ লাখ পাউন্ডে কেনা হয়। এখন শায়ানের সঙ্গে তার চাচাত ভাই শাহরিয়ারের সম্পদ জব্দেরও খবর এলো।

যেসব সম্পদ জব্দের আদেশ হয়েছে সেগুলো ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আইল ম্যান অথবা জার্সির মতো কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছে কোম্পানিগুলোর নথিতে উল্লেখ রয়েছে। এসব সম্পদ দাম ১২ লাখ পাউন্ড থেকে ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ড। গত বছর গার্ডিয়ান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে শায়ান ও শাহরিয়ারের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে। সেই অনুসন্ধানে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের ৪০ কোটি পাউন্ডের সম্পদের খোঁজ মেলে।

এনসিএ যেসব সম্পদ জব্দ করেছে তার মধ্যে উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেন্সের একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। গ্রেশাম গার্ডেনসের বাড়িটিতে আগে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা থাকতেন। তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন এমপি। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়ি উপহার নেওয়ার খবরে সমালোচনার মধ্যে সমপ্রতি ব্রিটেনের লেবার সরকারের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ। এই দুটি সম্পদ ৭৭ লাখ পাউন্ডে কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছিল ফিন্যানশিয়াল টাইমস।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের নীতিবিষয়ক পরিচালক ডানকান হেইমস বলেন, আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের তদন্ত চালু রাখতে এবং অবিলম্বে সব সন্দেহজনক সম্পদ জব্দের আহ্বান জানাই। এনসিএর একজন মাখপাত্র বলেছেন, আমরা নিশ্চিত করতে পারি, চলমান সিভিল তদন্তের অংশ হিসেবে এনসিএ বেশ কয়েকটি জব্দ আদেশ পেয়েছে।

এর আগে শায়ানের একজন মুখপাত্র ফিনানশিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আমাদের মক্কেল কোনো ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। এসব অভিযোগ তিনি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করছেন। যুক্তরাজ্যে যে কোনো ধরনের তদন্তে তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সেখানে বহু মানুষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।

টিআইবির সাধুবাদ : অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির নেওয়া প্রথম পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থসম্পদ প্রথমবারের মতো জব্দের ঘটনায় আমরা আশাবাদী হতে চাই। তবে এটাকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই, বরং এই জব্দ হওয়া অর্থসম্পদ হিমশৈলের চূড়ামাত্র। পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট আরো বহু ব্যক্তি বিপুল পরিমাণে অর্থসম্পদ পাচার করেছেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন। যৌথ আইনি সহায়তার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি অর্থপাচারকারীদের অবৈধ সম্পদও চিহ্নিত ও জব্দ করে দেশে ফেরত পাঠাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই আমরা।

তিনি বলেন, শুধু যুক্তরাজ্য নয়, সাম্প্রতিক কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (বিশেষ করে দুবাই) বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থসম্পদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। আমরা এসব দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিও আহ্বান জানাই তারা যেন যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপ অনুসরণ করে নিজেদের আইনি কাঠামো ও যৌথ আইনি সহায়তার আওতায় বাংলাদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন অবৈধ সম্পদ চিহ্নিত, জব্দ এবং পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসরায়েলের হামলায় একসঙ্গে ৯ সন্তানকে হারালেন গাজার চিকিৎসক
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিক মুন্নী সাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ