Home উপ-সম্পাদকীয় সুখে দুঃখে যান্ত্রিক জীবন থেকে কবে মুক্তি পাব

যান্ত্রিক জীবন থেকে কবে মুক্তি পাব

0
যান্ত্রিক জীবন থেকে কবে মুক্তি পাব

‘আমার কার্য আমাকেই করিতেই হইবে, আর একজন করিয়া দিলে কাজ হইতে পারে কিন্তু আমার ভালো হইবেনা। কাজের চেয়ে মানুষ শ্রেষ্ঠ। কলে কাজ হয়, কিন্তু কলে মানুষ হয়না’-উক্তিটি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্বদেশী সমাজ’- প্রবন্ধের। আজকের সমাজব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে কবিগুরুর উপরোক্ত বাণী নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। কেননা আজকাল আমরা নিজের কাজ নিজে করতে এক প্রকার ভুলেই গেছি। কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রেই শুধু ‘দশে মিলে করি কাজ’ এর সফল বাস্তবায়ন দেখি। যদিও সবার সহযোগিতা ছাড়া ভালো কোনো কাজ সম্ভব নয়। যন্ত্রের দ্বারা কাজ সম্ভব, কিন্তু যন্ত্রের দ্বারা ভালো মানুষ তৈরি সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক সময়ে যে যন্ত্রের কথা বারবার জনসমক্ষে এসেছে, সেই মোবাইল নামক যন্ত্র ব্যবহারে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সেশনজটের উত্তরোত্তর অগ্রগতি ঘটেছে বটে কিন্তু আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক যাচাই হয়েছে কি?
মহামারীর এ ছোবল বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং এর পরিসমাপ্তি ঘটেছে ঘরে থাকা শিশুকিশোরদের মোবাইল যন্ত্রে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। প্রাকৃতিক ও যান্ত্রিক মহামারির কবল থেকে মুক্তি পেয়ে যখনই শিক্ষার্থীরা স্কুল/কলেজ মুখী হতে চললো, ঠিক তখনই আবার আঘাত হানলো ওমিক্রন। এই ভাইরাসটি স্থায়ীভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে যেন দখল করে নিল! এমনিতেই করোনা পরবর্তী পরীক্ষার ফল প্রকাশে মন্ত্রণালয় যে নীতি অনুসরণ করলো, তাতে শিক্ষার্থীদের খুশি হবার পাশাপাশি অনেকেই এর চরম ফল ভোগ করলো। তবুও শিক্ষা ব্যবস্থা সচল করার ফলে সকলের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে বলা যায়। কিন্তু বিধি বাম! আমাদের সমাজব্যবস্থায় সবকিছু যথারীতি চললেও আমাদের শিক্ষাঙ্গন আবার বন্ধ হয়ে গেল ওমিক্রন এর জন্যে। ফল প্রকাশ থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সকল দেশহিতৈষী সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আরেকটু যত্নবান হলে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা নিজের কাজের ফল নিজেই ভোগ করবে এবং অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবেনা। পরিশেষে মোবাইল নামক যন্ত্রণাটাকে দোষারোপ না করে কীভাবে এর কার্যকারিতা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কমিয়ে আনা যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া উচিৎ নয় কি?
লেখক : শিক্ষক, কবি