যানজট নিরসনে সমন্বয় জরুরি

| শনিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

যানজট এখন শুধু চট্টগ্রাম বা ঢাকারই নয়, জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। যানজট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। যানজটে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। আমাদের দেশের প্রায় রাস্তাই প্রয়োজন অনুযায়ী নির্মিত ও যথেষ্ট প্রসারিত। কিন্তু যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে রাস্তা দখল করা হচ্ছে। ফলে সময়অসময়ে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ যানজট। রাস্তার পাশে ও ফুটপাতে দোকানপাট গড়ে ওঠার কারণেও তীব্র যানজট হচ্ছে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘নগরে বাড়ছে যানজট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘নগরীতে সড়ক দখল করে দোকানপাট, ভ্রাম্যমাণ হাট বসানো এবং যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যান চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এ যানজটে আটকা পড়ে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। অপরদিকে রাস্তা দখলের কারণে বাধ্য হয়ে গাড়ি রাস্তার মাঝখানে সড়ক বিভাজক ঘেষে চলাচল করছে। ফলে পথচারীরা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

নগরের অন্যতম ব্যস্ততম স্থান নিউ মার্কেট এলাকা। নগরের সব দিক থেকে সড়ক এসে এখানে যুক্ত হয়েছে। এতে সরেজমিনে দেখা যায়, জহুর হকার্স মার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজার মাঝের সড়কটির প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ জুতা, গার্মেন্টস সামগ্রী ও খাবারের দোকানপাট। তিন লেনের এই সড়কের দুই লেনেই দোকান বসিয়ে এবং গাড়ি রেখে দখল করা হয়েছে। মাত্র একটি লেনে চলছে গাড়ি। দেখে মনে হচ্ছে এটি কোনো হাটবাজার। এছাড়া সড়কের মাঝখানে ভ্রাম্যমাণ ওষুধ বিক্রেতারা মাইক্রো বাস বসিয়ে হাত মাইক বাজিয়ে ওষুধ বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতে সড়কটিতে দীর্ঘ যানজট লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া কদমতলী থেকে যে সড়কটি নিউ মার্কেট এলাকায় যুক্ত হয়েছে, সেটিতেও অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে মোটরসাইকেল, সিএনজি রাখা হয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ দোকান তো আছেই। নিউ মার্কেট এলাকায় এরকম সব কটি সড়ক দখল করে দোকানপাট ও যত্রতত্র পার্কিং করতে দেখা গেছে। একই চিত্র নগরের আন্দরকিল্লা, চকবাজার, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ এলাকা ও মুরাদপুরসহ নগরীর প্রায় সব কটি ব্যস্ততম এলাকায়।’

আসলে যানজট এখন চট্টগ্রামবাসীর জন্য এক বিড়ম্বনার নাম। যানজটের কারণে যে সময়ক্ষেপণ ঘটছেঅর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এ সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের রফতানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিদেশীরা বাংলাদেশের রাজধানীকে অস্বস্তির দৃষ্টিতে দেখে যানজটের কারণে। বলা যেতে পারে, যেসব কারণে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বিঘ্নিত হচ্ছে যানজট তার অন্যতম। প্রায় ৭০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরী অন্যতম মেগাসিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠার বড় অন্তরায় যানজট। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে অনেক সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যা হয়। বস্তুত যানজটের কারণে চট্টগ্রামবাসীর সামগ্রিক জীবনধারাই পাল্টা গেছে। একসময় এ শহরে ৩০ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করতে অনেক সময় চলে যায়। এখন অবস্থা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, সামান্য দূরত্ব অতিক্রম করতেও সময় লাগবে আগের থেকে অনেক বেশি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া মানুষ এখন আর কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা চিন্তাও করে না। এই বিচ্ছিন্নতা যে সমাজে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন।

ট্রাফিক আইন না মানা, পরিকল্পনার অভাব, ফুটপাত দখল, প্রাইভেটকারের সংখ্যা বিদ্যুৎ গতিতে বৃদ্ধি পাওয়াও যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যানজটের কারণ হিসেবে ভাঙাচোরা রাস্তা এবং কারণেঅকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকেও দায়ী করা হচ্ছে।

যানজটের জন্য মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসনও দায়ী, সে কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। গ্রাম থেকে প্রতিদিন মানুষ আসে কাজের খোঁজে। চট্টগ্রাম শহর পুরোপুরি অর্থনীতিনির্ভর শহর হয়ে গেছে। সরকারের যেসব পরিকল্পনা, তাতে এই অভিবাসন ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, অবকাঠামোর উন্নয়ন আর আইনের কথা যতই বলা হোক না কেন, সবকিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে। যে কোনো পর্যায়েই যাওয়া হোক, যানজট হবেই, যদি মানুষের সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে রাখা না যায়। এর জন্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যে শহরে লোকসংখ্যা বেশি, সেখানে তিন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা দরকারসারফেস, এলিভেটর ও আন্ডারগ্রাউন্ড। আমাদের এখানে শুধু সারফেসটাই আছে। এটা কোনো বড় শহরের চিত্র নয়।

মোট কথা, যানজট নগরবাসীর মনোপীড়ার কারণ। যানজটে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে শরীর ও মনে যে চাপ পড়ে, তার ফলে বিবিধ রোগে, মনোবিকারে আক্রান্ত হচ্ছে নগরের মানুষ। কর্মীমানুষ সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারে না। পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হয়। এসবের সামষ্টিক প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়ছে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বয় জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে