রেলসেবা ও নিরাপত্তা সপ্তাহ চলছে। চট্টগ্রাম রেল স্টেশন চত্বরে যাত্রীদের চকলেট এবং ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে গত শুক্রবার। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে গঠন করা হয়েছে ৭টি টাস্কফোর্স। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেলওয়ের কর্মকর্তা ট্রলি যোগে বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করবেন। এবং যাত্রীদের সাথে কথা বলবেন। তাদের সমস্যা এবং পরামর্শ গ্রহণ করবেন। প্ল্যাটফর্ম দেখা, ওভারব্রিজের অবস্থা, চলন্ত ট্রেনে পানি-লাইটের অবস্থা এবং ট্রেনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখবেন।
এদিকে, রেলমন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনের সময় বলেন, রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সেবা সপ্তাহে যেসব বিষয় নিশ্চিত করবে তা হলো- কোভিডকালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ ট্রেন চলাচল নিশ্চিতকরণ, রেলওয়ের হাসপাতাল সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া, রেলওয়ে স্টেশন ও স্টেশন স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করা, যাত্রীদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, স্টেশনের ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা আপডেট রাখা, প্ল্যাটফরম, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, ওয়েটিং রুম, রিটায়ারিং রুম ও টয়লেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, ট্রেনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, যাত্রী অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া, যাত্রীদের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণ প্রদর্শন, স্টেশনে প্রতারক, টিকেট কালোবাজারী ও অন্যান্য অবাঞ্চিত প্রবেশ প্রতিহত করা, স্টেশন ও ট্রেনে রক্ষিত ফার্স্ট এইড বঙ সংরক্ষণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা, ভেন্ডিং শপ ও ক্যাটারিং সার্ভিসে বিক্রিত খাদ্যের মূল্য ও মান বজায় রাখা, যাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষায় রেলওয়ে পুলিশ এর তৎপরতা বৃদ্ধি, নারী, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও শিশু যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য চলাচলসহ সিঁড়ি, হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করা।
যাত্রী পরিবহন খাতে যত প্রকার বাহন আছে এর মধ্যে রেল সবচেয়ে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবেই সর্বজন স্বীকৃত। যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনে সবচেয়ে কম খরচের মাধ্যম হচ্ছে রেল। সাশ্রয়ী হওয়ায় এই উপমহাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই ট্রেন হলো সাধারণের বাহন। বাংলাদেশ রেলওয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের নাগরিকদের করের পয়সাতেই চলে রেলওয়ে। আমাদের এ তথ্যও জানা আছে যে বছরের পর বছর রেলওয়ে একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সাধারণের কল্যাণের স্বার্থে রেলওয়ের জন্য ভর্তুকি গুনতে হয়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানকেই মুনাফা করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। পৃথিবীব্যাপী সাধারণের স্বার্থে সব রাষ্ট্রই এক বা একাধিক খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। কিন্তু এই ভর্তুকি তো যুক্তিগ্রাহ্য হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিপুল বিনিয়োগ হলেও সে তুলনায় যাত্রীসেবা কম। যাত্রীসেবা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত না হলে রেলপথ বাড়িয়ে বা ট্রেন বাড়িয়ে কোনো সুফল মিলবে না। রেলপথ ও রেলসেতু নির্মাণ ছাড়াও যাত্রীসেবা বাড়িয়ে রেলকে বদলে দিতে হবে। কারণ রেল বদলে গেলে দেশের অর্থনীতি আরো ইতিবাচকভাবে বদলে যাবে। গত ১০ বছরে ৮১টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এখন সোয়া লাখ কোটি টাকার ৪৮টি প্রকল্পের কাজ চলছে। বিপুল বিনিয়োগ হলেও গতি আসেনি ট্রেনে। কারণ, ঢাকায় ব্রডগেজ ও মিটার গেজের ৩৫ কি.মি. রেলপথে ট্রেন চলে গড়ে ২০ কি.মি. গতিতে। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার পেরোতেই লাগে প্রায় আধ ঘণ্টা। সরকার দেশের সব রেলপথ ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন করার নীতি গ্রহণ করেছে। তবে তাতেও গতি বাড়ছে না।
এজন্য দরকার রেলে সুশাসন ও জবাবদিহিতা। রেলমন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজন বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে বলেছেন, কাজ কোনো প্রক্রিয়ার অজুহাতে ফেলে রাখা যাবে না। তাঁর এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য যুথবদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারী রেলে কম। এজন্য তদারকি জোরদার করতে হবে।
রেলের প্রতি মানুষের আগ্রহ আগেও ছিল, এখন আরো বেড়েছে। সেবা নিয়েও যাতে তাঁরা সন্তুষ্ট থাকেন, তার সুব্যবস্থা করতে হবে।