চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর দিয়ে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পটি আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠছে। প্রকল্পটি পুনরায় যাচাই–বাছাই করা হলেও প্রকল্প ব্যয় আগের মতই অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী।
পরিকল্পনা কমিশনের একনেক উইং সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করবেন। সভার কার্য তালিকায় কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি রয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পুরাতন সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। যা ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ৭ হাজার ১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা দেবে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ)।
এই ব্যাপারে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ–সংক্রান্ত ফোকাল পার্সন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা আজাদীকে বলেন, পুনরায় যাচাই–বাছাই শেষে কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি আগামীকাল (আজ) সোমবার একনেকে উঠবে।
যাচাই–বাছাই করা হয়েছে; প্রকল্প ব্যয় আগের মতই (১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা) অপরিবর্তিত আছে।
প্রকল্পটি ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তখন একনেক থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়। পরবর্তীতে নতুন নকশায় সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা; যা আগের প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয়ের ১০ গুণেরও বেশি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ১০ গুণ বেশি ব্যয় ধরায় বিগত সরকারের আমলে প্রকল্পটি আর পাস করা হয়নি। প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
প্রকল্পের ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর নতুন একটি রেল সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সরকারি অর্থায়নে ২০১২ সালে এসএমইসি ও ডব্লিউআইইসিওএন কোং লিমিটেড এবং বাংলাদেশের এসিই কনসালটেন্ট লিমিটেড ও ইঞ্জিনিয়ার কনসোর্টিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করে।
সরকার সেতু নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার অনুরোধ জানালে ইডিসিএফের নিয়োজিত পরামর্শক আগের ফিজিবিলিটির ভিত্তিতে নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ৭ দশমিক ৬২ মিটার বিবেচনা নিয়ে ২০১৬ সালে পুনরায় প্রকল্পের ফিজিবিলিটি সম্পন্ন করে।
এ ফিজিবিলিটি স্টাডির আলোকে রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের জন্য প্রণীত প্রকল্পের ডিপিপি ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটির অনুমোদন না দিয়ে সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়, প্রস্তাবিত সেতুর সড়ক ও রেল সেতুর জন্য আলাদা আলাদা ডিজাইন প্রণয়ন করে পুনরায় একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে।
এ নির্দেশনা এবং পরে ২০১৯ সালে বিআইডব্লিউটিএ কর্ণফুলী নদীর উপর কালুরঘাট পয়েন্টে রেল কাম রোড সেতুর নির্মাণে নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২ মিটার রাখার জন্য রেল মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেয়। এই নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শেষ পর্যন্ত নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ২ মিটার করার সিদ্ধান্ত হয়। নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২ মিটার রেখে নতুনভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার জন্য ইডিসিএফের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর উশিন অ্যান্ড দোহা ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন জেভির সঙ্গে পরামর্শক চুক্তি সই করা হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের মে মাসে চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি দাখিল করে। ওই ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টের ভিত্তিতে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর রেলওয়ের ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন এবং দুই লেনবিশিষ্ট সড়কপথের সুবিধা রেখে রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়।
নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্সের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সেতুর উচ্চতাসহ ভায়াডাক্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যার কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দীর্ঘ সময়ের নানা চড়াই–উৎরাই পেরিয়ে আজ ৭ অক্টোবর সোমবার একনেকের সভায় উঠছে চট্টগ্রামবাসীর বহুল আকাঙ্খিত কালুরঘাট সেতু প্রকল্পটি। আজকের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হলে চট্টগ্রামের সাথে কঙবাজারের নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।