বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যুমনা অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তা ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে যমুনার দিকে রওনা হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে আসার পর ওই মিছিল পুলিশ আটকে দেয়। এক পর্যায়ে সেখানে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর ফের শিক্ষার্থীরা যমুনার দিকে আগাতে শুরু করলে তাদের উপরে জলকামান থেকে পানি ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় বেশ কয়েকজন পুলিশ ও শিক্ষার্থী আহত হন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
এদিকে চলমান আন্দোলনের ভিত্তিতে প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা–নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে সরকার। এই কমিটি বিএসসি ও ডিপ্লোমাধারীদের যোগ্যতা, কাজের সুযোগ এবং পেশাগত কাঠামোর যৌক্তিকতা পরীক্ষা করবে এবং এ বিষয়ে সুপারিশ পেশ করবে। গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কমিটি বিষয়ক শাখার অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনৈতিক) মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে সভাপতি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সওবা) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি প্রকৌশলী মো. কবির হোসেন, বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনিক্যাল এডুকেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. প্রকৌশলী তানভির মঞ্জুর।
কিন্তু এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উল্টো পাঁচ দফা দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ। তিনি বলেন, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে আন্দোলনকারীদের সামনে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং জবাবদিহি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিকে আমাদের প্রতিনিধিত্বের অনুপযুক্ত মনে করি। আমরা সেটি প্রত্যাখ্যান করলাম। অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিসহ প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের অংশীদারদের নিয়ে কমিটি সংস্কার করতে হবে।
জুবায়ের আহমেদ বলেন, আমাদের পেশ করা তিন দফা দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেনে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এই মর্মে সংশ্লিষ্ট তিন উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান ও সৈয়দ রিজওয়ানা হাসানকে এসে এর নিশ্চয়তা দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফায় আরও রয়েছে, পুলিশের হামলায় আহত সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে। আন্দোলন চলাকালীন সব শিক্ষার্থীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ দিয়ে এই যৌক্তিক আন্দোলনে আর কোনো হামলা করা যাবে না। যে পুলিশ সদস্যরা হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
২ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক : অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন আন্দোলনরত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টার পর রেলভবনে এই বৈঠক শুরু হয়। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১১ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। দুই উপদেষ্টার মধ্যে রয়েছেন– বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এদিকে নিজেদের পক্ষে ফল আসার আগ পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।
বুয়েট উপাচার্যের আহ্বান : প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিচারের পাশাপাশি তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশবিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ সভ্য সমাজে কোনোভাবে কাম্য নয়। অথচ আজ প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা দাবি জানাতে যমুনায় যাওয়ার সময় পুলিশ নির্মমভাবে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে।
ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশের পর শাহবাগ ছাড়লেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা : প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের যমুনামুখী মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ ও হামলার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর দুঃখ প্রকাশের পর জনদুর্ভোগের মত কর্মসূচি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার রাত ১০টার পর শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে এসে ডিএমপি কমিশনার শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের বলপ্রয়োগকে অপ্রীতিকর হিসেবে তুলে ধরে দুঃখ প্রকাশ করেন। এ ঘটনা তদন্তে বৃহস্পতিবার (আজ) পুলিশের তরফ থেকে একটি কমিটি গঠন করার কথাও বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার চলে যাওয়ার পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১১টার দিকে শাহবাগ ছেড়ে যান আন্দোলনরত বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেওয়ার আগে তারা পরবর্তীতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কোনো কর্মসূচি পালন না করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তাদের দাবিগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।