যত্রতত্র মামলার আলামত

শেডের ব্যবস্থা হয়নি, নানা সমস্যা নতুন আদালত ভবন

হাবীবুর রহমান | মঙ্গলবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

কোর্ট হিলের নতুন আদালত ভবনের পাদদেশে চলাচলের রাস্তার ধারে সারি সারি রাখা আছে মামলার আলামত। এসব আলামতের মধ্যে রয়েছে প্রাইভেট কার, হাইচ, সিএনজি থেকে শুরু করে রিকশা ও মোটর সাইকেল। আলামত সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত কক্ষে জায়গা সংকোলন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় এসব আলামত খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। এতে রোধে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে মামলার প্রাণ খ্যাত আলামত। এছাড়া আলামতের নানা যন্ত্রাংশ ছুরির ঘটনাও ঘটছে। বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী মানুষ এমনকি কারাগার থেকে আদালতে আনা নেওয়ায় ব্যবহৃত গাড়িকেও সমস্যায় পড়তে হয়। হাজতখানার সামনের সরু রাস্তার একপাশে সারি সারিভাবে রাখা আলামতগুলোর কারণে এসব গাড়ি ঘুরাতেও সমস্যা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্তাধীন ও বিচারাধীন মামলার আলামতগুলোর জন্য আলাদা একটা শেডের ব্যবস্থা করা দরকার। যেখানে নিরাপদে থাকবে আলামতগুলো। সরু রাস্তাটিও ফ্রি থাকবে। হাজতীদের গাড়ি প্রবেশ ও বের হতে ভোগান্তিও আর থাকবে না। আদালতসূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলার জন্য দুটি মালখানা রয়েছে। এ দুটি মালখানার অবস্থান নতুন আদালত ভবনের ১ম ও তৃতীয় তলায়। তৃতীয় তলার জেলা মালখানায় আলামত রয়েছে সাড়ে তিন হাজার। ১ম তলার মহানগর মালখানায় রয়েছে ৫১ হাজারের বেশি মামলার আলামত। মহানগর মালখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম নেওয়াজ আজাদীকে বলেন, আমাদের মালখানায় জায়গা সংকোলন না হওয়ায় বাইরে কিছু আলামত রাখা হয়েছে। বাধ্য হয়েই আমরা এটি করেছি। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। গত জানুয়ারি মাসে এডিসি প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ডিসি ক্রাইম এন্ড অপারেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সিএমপির পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। একটি শেড হলে খুবই ভালো হয়। শেডের ব্যবস্থা হলে খোলা আকাশের নিচে মামলার আলামত রাখতে হবে না। মালখানার বাইরে কতো আলামত রয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে সঠিক সংখ্যা জানা নেই বলেও জানান উপপরিদর্শক মো. গোলাম নেওয়াজ।

জেলা হাজতখানার ইনচার্জ (এসআই) দেলোয়ার হোসেন আজাদীকে বলেন, মালখানার বাইরে আমাদের তেমন একটা আলামত নেই। হাজতখানার সামনের রাস্তা এবং রাস্তাটির অপর একটি অংশে দু’একটা মনে হয় আছে। বাধ্য হয়ে এসব আলামত মালখানার বাইরে রাখতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, মালখানা ভর্তি আলামত। কোথাও কোন জায়গা অবশিষ্ট নেই। তিন তলায় যানবাহন উঠানোও সম্ভব না। তাই বাইরে রাখা হয়েছে। আলামত রাখার জন্য একটি বড় শেডের বিকল্প নেই জানিয়ে এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে অবগত আছেন।

মহানগর হাজতখানার ইনচার্জ মো. রফিক উল্লাহ আজাদীকে বলেন, প্রতিদিন থানা থেকে ৬০ থেকে ১০০ জন আসামি আসেন। কারাগার থেকে আসে ১৫০ থেকে ২৫০ জন। জেলা হাজতখানায় আসে প্রতিদিন গড়ে দেড়শ জন আসামি। হাজতখানার সামনে পার্কিং করা হয় অসংখ্য মোটরসাইকেল। বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীর গাড়ি রয়েছে। জেলখানা থেকে প্রতিদিন দুটি বাস আসে। অথচ এখানকার রাস্তা হচ্ছে সরু। এই সরু রাস্তাটির ধারে সারি সারিভাবে রাখা আছে মামলার আলামত। এসব আলামতের কারণে গাড়ি প্রবেশ এবং বের করতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন চালকরা।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকশিনার (প্রসিকিউশন) আরাফাতুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, মালখানার বাইরে কিছু আলামত রাখার বিষয়টি অবশ্যই অবগত আছি। সব সময় ছিল, এখনো রয়েছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বারবার জানিয়েছি। আমাদের আর কিছু করার নেই। তবে কোন একটি জায়গা পাওয়া গেলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারী মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, জেলা পুলিশ ও মহানগর পুলিশের হেফাজতে থাকা মামলার আলামতগুলো আসলেই অব্যস্থাপনার মধ্যে রয়েছে। অথচ মামলার আলামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলামত ছাড়া মামলা প্রমাণ করা যায় না। এমন অবস্থায় অব্যবস্থাপনা মেনে নেয়া যায় না। একটি উন্মুক্ত স্থান প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি দেখা প্রয়োজন।

জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, মামলার প্রাণ হচ্ছে আলামত। এ আলামত থাকবে নিরাপদ। নানা সময়ে বিষয়টি আলাপআলোচনা হয়েছে। আশা করছি, একটি উন্মুক্ত জায়গা বা শেডের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুচরায় বাড়ছে চিনির দাম
পরবর্তী নিবন্ধতৃতীয় দিনে আ. লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ৮৮ জন