যত্রতত্র পোস্টার সাঁটানো বন্ধ হচ্ছে চলতি মাসে

শুরুতে দুই ওয়ার্ডে বসছে পোস্টার বোর্ড

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

যত্রতত্র পোস্টার সাঁটানো বন্ধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এক বছর আগে নেয়া উদ্যোগটি অবশেষে কার্যকর হচ্ছে। চলতি মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে পৃথক দুই ওয়ার্ড থেকে শুরু হচ্ছে এ কার্যক্রম। ওয়ার্ড দুটি হচ্ছে ১৫নং বাগমনিরাম ও ১৬ নং চকবাজার। চসিকের নিয়োগকৃত ঠিকাদার ওই দুই ওয়ার্ডে ১০টি করে ২০টি পোস্টার বোর্ড স্থাপন করবে। এরপর থেকে নির্ধাারিত বোর্ডগুলোর বাইরে যেখানেসেখানে আর কেউ পোস্টার লাগাতে পারবে না। এর মধ্য দিয়ে বন্ধ হবে যত্রতত্র পোস্টার সাঁটানো এবং রোধ হবে শহরের সৌন্দর্যহানি। পর্যায়ক্রমে ৪১ ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন করা হবে উদ্যোগটি।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমানা দেয়াল, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়সহ পাড়ার অলিগলির খালি জায়গাসহ প্রায় সবখানেই বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের অংশ হিসেবে লাগানো হয় পোস্টার। যত্রতত্র এসব পোস্টার লাগানোর কারণে সৌন্দর্যহানি ঘটছে শহরের। চসিকের এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শহরে সাঁটানো ৯০ ভাগই পোস্টার হচ্ছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এমন স্থানগুলোতে পোস্টার বেশি সাঁটানো হয়। এরপর গ্রোথ সেন্টার বা যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় সেখানে পোস্টার সাঁটানো হয়।

সিটি কর্পোরেশন কর আইন১৯৮৬ অনুযায়ী, শহরে ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট ফি দিয়ে অনুমতি নিতে হবে সিটি কর্পোরেশন থেকে। এক্ষেত্রে ৬ বর্ঘফুটের একটি পোস্টারের জন্য দৈনিক ১০ টাকা এবং ১০ বর্গফুটের পোস্টারের জন্য দৈনিক সাত টাকা পরিশোধ করার বিধান রয়েছে। যদিও বাস্তবে সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমতি নিয়ে কেউ পোস্টার সাঁটান না। ফলে রাজস্ব বঞ্চিত হয় চসিক।

এ অবস্থায় পোস্টার লাগানোর স্থান নির্দিষ্ট করার জন্য ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রথম উদ্যোগ নেয় চসিক। পরে জরিপ চালিয়ে একই বছরের আগস্ট মাসে পোস্টার বোর্ড স্থাপনের জন্য ১১৫টি স্থানের একটি তালিকাও করে। এর পাঁচ মাস পর ওই তালিকার সাথে আরো ৩৫টি যোগ করে অর্থাৎ শহরের ১৫০টি স্থানে পোস্টার বোর্ড স্থাপনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় চসিক। ৯ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনেও কেউ জমা দেয়নি। এরপর গত জুন মাসে চসিকের নিজস্ব অর্থে পোস্টার বোর্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। সেটাও কার্যকর হয়নি।

সর্বশেষ আবেদনের প্রেক্ষিতে চকবাজার ও বাগমনিরাম ওয়ার্ডে দুই ঠিকাদারকে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে চকবাজার ওয়ার্ডে ‘জসিম এন্টারপ্রাইজ’ এবং বাগমনিরাম ওয়ার্ডে ‘সাইন কালেকশান’কে চূড়ান্ত করে। চকবাজার ওয়ার্ডে গুলজার মোড় (দুটি), চট্টেশ্বরী রোড, অলি খাঁ মসজিদের বিপরীতে, চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজ এলাকা, কাপাসগোলা কলেজ রোড, চট্টগ্রাম কলেজ হোস্টেলের পশ্চিম গেইটে, কেয়ারির ডানপাশে ফুটপাতেসহ ১০টি স্পটে এবং বাগমনিরাম ওয়ার্ডের জিইসি মোড়, ওয়েলফুডের বিপরীতে, শিল্পকলার সামনে, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ সংলগ্ন নার্সারির পাশে, র‌্যাডিসন ব্লু ও শিশুপার্কের মাঝখানে এবং কাজীর দেউড়ি মোড়সহ ১০টি স্পটে পোস্টার বোর্ড স্থাপন করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, জায়গা পাওয়া স্বাপেক্ষে বোর্ডগুলোর আয়তন হবে ৮ বাই ১২ এবং ৮ বাই ১০ ফুট। চকবাজার ওয়ার্ডে জায়গা পেলে ১২টিও হতে পারে। পোস্টার বোর্ড থেকে কি পরিমাণ রাজস্ব আসবে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য শহরের সৌন্দর্যহানি রোধ করা। এরপরও প্রতিটি বোর্ড থেকে ১ লাখ টাকা করে ২০টি বোর্ড থেকে ২০ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে কর্পোরেশনের একটাকাও খরচ হবে না। যেহেতু বোর্ডগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই স্থাপন করবে। কবে থেকে পোস্টার বোর্ড এর কার্যক্রম শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে কয়েকটি স্থাপন করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সবগুলোই হয়ে যাবে। নির্দিষ্ট বোর্ডের বাইরে কেউ অন্যত্র পোস্টার সাঁটালে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধড. ইউনূসকে ইস্যু করে বিএনপি অশুভ খেলা খেলতে চায় : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধসরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ : ফখরুল