জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের তারুণ্য নির্ভর টি-টোয়েন্টি দলের। প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলেও ব্যাটিংয়ে বেশকিছু ইতিবাচক দিক ছিল। কিন্তু দিন শেষে যেহেতু জয়টায় বড় কথা সেদিক থেকে প্রথম পরীক্ষায় ফেলই করেছিল সোহানের দল। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে মোসাদ্দেক-লিটনরা। বিশেষ করে এ দুজনের কথাই বলতে হবে। বল হাতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যে মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সেটাকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন লিটন দাশ। মূলত এ দুজনের দুর্দান্ত নৈপূণ্যে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে সমতায় ফিরলো বাংলাদেশ।
ইনিংসের প্রথম বল থেকে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করে ম্যাচ জয়েল রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। আর সে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি লিটন-আফিফদের। আগের ম্যাচের ঠিক উল্টোটাই হয়েছে গতকাল বাংলাদেশের বেলায়। আগের ম্যাচে বোলাররা অকাতরে রান দিয়েছেন। আর গতকাল রানের জন্য প্রতিপক্ষকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছিলেন মোসাদ্দেকরা। আর ব্যাট হাতে লিটন ফিরলেন স্বরূপে। সাথে সমর্থন পেলেন আফিফদের কাছ থেকে। আর তাতেই দারুণ স্বস্তির এক জয়। এখন আগামীকাল সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করার পরিকল্পনাই নিশ্চয় করবে বাংলাদেশ।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়েকে প্রথম ওভারেই জোড়া ধাক্কা দেন মোসাসদ্দেক। প্রথম বলেই এই স্পিনার ফেরান ওপেনার রেগিস চাকাভাকে। উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান সোহানের হাতে ক্যাচ দেন চাকাভা। ওভারের শেষ বলে আবার ধাক্কা মোসাদ্দেকের। এবার কভার পয়েন্টে মাহদি হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ওয়েসলি মাধভিরে। প্রথম ওভার শেষে স্বগতিকদের রান ৫। হারাতে হয়েছে দুই উইকেট। পরের ওভারেও মোসাদ্দেকের ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত থাকে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে আবারও আঘাত হানলেন তিনি জিম্বাবুয়ের ওপর। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ফিরলেন ওপেনার এবং অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে প্রথম স্লিপে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন আরভিন। ৬ রানে বিদায় নেন তিনজন ব্যাটার। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে শন উইলিয়ামসকে রিটার্ন ক্যাচে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন মোসাদ্দেক। ৭ বলে ৮ রান করে আউট হন উইলিয়ামস। নিজের শেষ এবং ইনিংসের সপ্তম ওভারে বল করতে এসে নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নিলেন মোসাদ্দেক। এবার তার শিকার মিল্টন সুম্বা। ওভারের ৫ম বলে সুইপ শট খেলতে গিয়েছিলেন সুম্বা। কিন্তু ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দুর্দান্ত এক ক্যাচে তাকে ফেরান হাসান মাহমুদ। সে সঙ্গে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট শিকারি হয়ে গেলেন মোসাদ্দেক। আর জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়াল ৫ উইকেটে ৩১।
দল যখন ধুকছিল তখন হাল ধরেন অভিজ্ঞ সিকান্দার রাজা। সাথে পেয়েছিলেন রায়ান বার্লকে। দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুললেন দুজন। শুরুর মোসাদ্দেক ভীতি কাটিয়ে এ দুজন দারুণভাবে মোকাবেলা করলেন মোস্তাফিজ, শরীফুল, নাসুমদের। গড়ে তুললেন ৮০ রানের জুটি। হাসান মাহমুদ এসে বার্লকে বোল্ড করে ফেরালে ভাঙ্গে এ জুটি। ৩১ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ৩২ রান করেন বার্ল। তারপরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন সিকান্দার রাজা। তুলের টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচে ২৬ বলে করেছিলেন অপরাজিত ৬৫ রান। এই ম্যাচে করলেন ৫৩ বলে ৬২ রান। মোসাদ্দেক হোসেন যখন একদিকে ধ্বংসলীলা চালিয়েছেন তখন অন্যদিকে ব্যাট হাতে দারুণ প্রতিরোধ গড়েন সিকান্দার রাজা। বলা যায় একাই দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন। ইনিংসের ১৯ তম ওভারে সিকান্দার রাজাকে ফেরান মোস্তাফিজ। তিনি ৪টি চার এবং ২টি ছক্কা মেরেছেন। শেষ দিকে লুক জংবি ৫ বলে ১১ রান করলে ১৩৫ রানে থামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। বাংলাদেশের মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৪ ওভার বল করে ২০ রান খরচায় নিয়েছেন ৫ উইকেট। তার ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নেওয়া। বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫ উইকেট নিলেন মোসাদ্দেক। তার আগে ৫ উইকেট নিয়েছেন ইলিয়াস সানি, মোস্তাফিজুর রহমান এবং সাকিব আল হাসান। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ এবং হাসান মাহমুদ।
১৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালই করেছিল বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাশ এবং মুনিম শাহরিয়ার দ্রুত গতিতে রান তোলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু উদ্বোধনী ভিতটা মজবুত হলো না। ৩৭ রানে ভাঙল এই জুটি। মুনিম শাহরিয়ারকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন রিচার্ড এনগারাবা। প্রথম ম্যাচের ন্যয় এই ম্যাচেও ব্যর্থ মুনিম। প্রথম ম্যাচে ৪ রান করার পর গতকাল করলেন ৭ রান। তবে আরেক ওপেনার লিটন দাশ যেন কচু কাটা করছিলেন জিম্বাবুয়ে বোলারদের। আগের ম্যাচে ১৯ বলে ৩২ রান করা লিটন এই ম্যাচে করলেন ৩৩ বলে ৫৬ রান। মেরেছেন ৬টি চার এবং ২টি ছক্কা। উইলিয়ামসের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন লিটন। তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের ষষ্ট হাফ সেঞ্চুরি।
লিটন ফেরার পরের ওভারেই উইকেট দিয়ে এলেন এনামুল হক বিজয়। নিজের ফেরাটাকে মোটেও সুখকর করতে পারছেন না এই টপ অর্ডার ব্যাটার। সিকান্দার রাজার প্রথম ওভারে অযথা উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাসাকদজার ক্যাচে পরিণত হলেন এনামুল। আগের ম্যাচে ২৭ বলে ২৬ রান করলেও এ ম্যাচে ফিরেছেন ১৫ বলে ১৬ রান করে। ৮১ রানে তিন উইকেট হারানোর পর স্বাগতিক বোলারদের আর কোনো সুযোগ দেননি আফিফ হোসেন এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজন অবিচ্ছিন্ন থেকে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে তবেই ফিরেন। ৫৫ রানের জুটি গড়েন দুজন ৪৮ বলে। ১৫ বল হাতে দলকে ৭ উইকেটের জয় পাইয়ে দেন আফিফ এবং শান্ত। ২৮ বলে একটি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন আফিফ। আর ২১ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন শান্ত। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ম্যাচের শুরুতেই বল হাতে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ এ সমতা আনল বাংলাদেশ। আগামীকাল সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুদল। এই ম্যাচে জয়ী দল জিতবে সিরিজ।