দিন দিন করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে চট্টগ্রামে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যায় আগের দিনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে রোগীর চাপও বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে গত বেশ কিছু দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা (কেবিন) সংখ্যা বাড়িয়েও চাপ সামালে হিমশিম অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতাল। সরকারি হাসপাতালগুলোও রোগীতে ভরে উঠছে। আইসিইউ শয্যা খালি-ই থাকছে না। সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টদের। সম্ভাব্য সঙ্কটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয় সভায় অংশ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এ তাগিদ দিয়েছেন। গতকাল দুপুরে অনলাইনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রামের দায়িত্ব প্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল। অন্যান্যের মাঝে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, সিএমপি কমিশনার সালেহ মো. তানভীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, বিএমএ সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খানসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা সভায় অংশ নেন। সভায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন শয্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অঙিজেন সরবরাহ ও আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেয়া হয়। এছাড়া সঙ্কটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফিল্ড হাসপাতালের কার্যক্রম পুনরায় চালুর পাশাপাশি বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করার পরিকল্পনা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। তাই হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ফিল্ড হাসপাতালের কার্যক্রম পুনরায় চালু ও অন্তত একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে মেরিন সিটি মেডিকেলের কথা বলা হয়েছে। হাসপাতালটিতে এস আলম গ্রুপের অর্থায়নে সেন্ট্রাল অঙিজেন, আইসিইউসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।
সিভিল সার্জন বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৪০ শয্যা থাকলেও এতদিন সব শয্যা ব্যবহার হয়নি। এখন ১৪০ শয্যাতেই রোগী ভর্তি দেয়া হবে। জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট-২ হিসেবে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে প্রস্তুত করে তোলা হচ্ছে। এতে আইসিইউ শয্যা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেলওয়ে হাসপাতালের আইসোলেশনেও রোগী ভর্তি রাখা যাবে। বিআইটিআইডিতে শয্যা বাড়িয়ে ৩২ থেকে ৫০টি করা হয়েছে। সেখানেও ৫ শয্যার আইসিইউ চালুর অপেক্ষায়।
চমেক হাসপাতালে বর্তমানে ৩০০ শয্যা প্রস্তুত থাকলেও রোগী ভর্তি আছে ২০০ জনের মতো। এরপরও শয্যা আরো বাড়ানো যায় কী না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনই শয্যা না বাড়িয়ে ভিন্ন পরিকল্পনার কথা বলছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন- শয্যা না বাড়িয়ে আমরা অঙিজেনের ফোর্টগুলো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন একটি শয্যায় অঙিজেন সরবরাহের জন্য একটি করে ফোর্ট আছে। এর মাধ্যমে সেন্ট্রাল অঙিজেন লাইন থেকে একটি শয্যায় একজন রোগীকে অঙিজেন দেয়া যায়। আমরা এখন প্রতি শয্যায় অঙিজেন ফোর্ট দুটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে শয্যার পাশাপাশি ফ্লোরে রেখে আরো একজন রোগীকে অঙিজেন সরবরাহ করা যাবে। ফলে শয্যা ৩০০ থাকলেও অন্তত ৫০০ রোগীকে অঙিজেন সেবা দেয়া যাবে। শ্বাসকষ্টের রোগীদের অঙিজেন সেবাই এখন বেশি প্রয়োজন।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইসোলেশনে আরো অনেক রোগীর সংস্থান করা যাবে জানিয়ে এর বাইরে সিটি কর্পোরেশনের আইসোলেশন সেন্টারের শয্যা-সেবা প্রসারিত করার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয় বলে জানান সিভিল সার্জন ।
মেরিন সিটি মেডিকেল সূত্র জানায়, ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালের অবস্থান শেরশাহ চন্দ্রনগর এলাকায়। বর্তমানে এখানে ৬০ শয্যায় করোনার চিকিৎসা চলছে। এতে প্রায় ৫০ জন চিকিৎসক ও ৪৮ জন নার্স রয়েছেন। রয়েছে দশটি এইচডিও ও ৫টি আইসিইউ শয্যা। কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সুবিধাও রয়েছে।