মেয়ের দায়ের কোপে প্রাণ হারালেন পিতা

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ার পুটিবিলায় দায়ের কোপে নিজ মেয়ের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন পিতা আবদুর রহমান (৫০)। তিনি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সরইয়া বলিরজুম এলাকার মৃত আলতাফ মিয়ার পুত্র ও পাঁচ সন্তানের জনক। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নিজ বসতঘরে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর অভিযুক্ত মেয়ে মোছাম্মৎ হুমায়রাকে (২৩) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা। সন্তান সম্ভবা হুমায়রা এক সন্তানের জননী। তার স্বামী আবদুস ছালাম পেশায় দিনমজুর।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন বছর আগে একই ইউনিয়নের গৌড়স্থান চৌধুরী পাড়ার আবদুস ছালামের সঙ্গে হুমায়রার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকেন হুমায়রা। মাঝে মধ্যে শ্বশুরবাড়িতে গেলেও সেখানে থাকতেন না। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পিতার সঙ্গে প্রায়ই কলহ লেগে থাকত মেয়ের। তারই জের ধরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিমত, হুমায়রা এমনিতেই একটু রুক্ষ মেজাজের মেয়ে।

স্থানীয় গ্রাম পুলিশ কবির আহমদ জানান, মেয়ে হুমায়রাকে বিয়ে দেয়ার সময় ছেলের পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আলাদা জায়গা কিনে তাদেরকে বসতঘর করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিয়ের এতদিনেও বসতঘর করে না দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের পরিবারে প্রায় সময় মনোমালিন্য দেখা দিত। ঘটনার সময় হুমায়রা গরুকে কুড়া খাওয়াচ্ছিল। এ সময় আবদুর রহমান মেয়ের কাছে ঘাস না খাওয়ায় গরুকে কুড়া কেন খাওয়াচ্ছে জানতে চান এবং এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এতে হুমায়রা ক্ষিপ্ত হয়ে দা নিয়ে পিতার উপর হামলে পড়ে। প্রাণ রক্ষার্থে দৌঁড়ে আবদুর রহমান ভাই বজলুর রহমানের বসতঘরে ঢুকে পড়ে। হুমায়রাও পিছু পিছু ধাওয়া করে পিতাকে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তার ডান হাতের কবজি ও ঘাড়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হন। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে ও হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছার আগেই ইউনিয়নের এমচর হাট এলাকায় তার মৃত্যু হয়।

নিহতের ভাতিজা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ঘটনার সময় তারা কেউ বসতঘরে ছিলেন না। পার্শ্ববর্তী বিলে ধান কাটতে গিয়েছিলেন। খবর পেয়ে দ্রুত এসে তার চাচাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। এছাড়া ওই বসতঘরেও তার চাচা, হুমায়রা ও তার দুই বছরের সন্তান ছাড়া কেউ ছিল না। অন্যরা সকলে বসতঘরের বাইরে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

নিহতের ভাই বজলুর রহমান জানান, তার ভাইয়ের গরুর ব্যবসা ছিল। বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করতেন। হুমায়রা তার ভাইয়ের দ্বিতীয় মেয়ে। বিয়ের পর থেকেই স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকে। এই নিয়ে বিভিন্ন সময় পারিবারিক কলহ দেখা দিত।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক জানান, মেয়ের দায়ের কোপে পিতার মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে গ্রাম পুলিশ পাঠানো হয়। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।

লোহাগাড়া থানার এসআই সত্যজিত ভৌমিক জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল লিপিবদ্ধ শেষে মরদেহ থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত মেয়ে হুমায়রাকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিহতের ভাই বজলুর রহমান বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত
পরবর্তী নিবন্ধএইচএসসি পাস তৈয়বের মোট সম্পদের মূল্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা