মেয়রের বিন বিতরণ অনুষ্ঠানে বিএনপির দুই গ্রুপে হাতাহাতি

চলে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর খলিফাপট্টিতে তিনজনকে ছুরিকাঘাত

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নগরের কোতোয়ালী থানার সাবএরিয়ায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের মাঝে বর্জ্য সংগ্রহের বিন বিতরণের সময় মেয়রের উপস্থিতিতে হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপ। এ ঘটনার রেশ ধরে মেয়র চলে যাওয়ার পর তিনজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এর মধ্যে দুইজনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছেন মহিন উদ্দিন ও মো. আসিফ। মহিন উদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাপসাপাতালে এবং আসিফকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া মারামারির ঘটনায় নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের মো. হারুনুর রশিদ এবং নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. আরশে আজিম আরিফ নামে দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত মহিন ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মো. ইয়াছিনের ভাই।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় আন্দরকিল্লাহ থেকে সাবএরিয়া পর্যন্ত বিন বিতরণ করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সাব এরিয়ায় বিন বিতরণকালে মেয়রের উপস্থিতিতে ফারুক নামে একজন আরিফকে পেছন থেকে থাপ্পড় দেয়। এতে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। উপস্থিত বিএনপি’র উর্ধ্বতন নেতাদের হস্তক্ষেপে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় মেয়র সেখানে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দুই পক্ষের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি থাকলে তা সমাধান করতে বলেন। এরপর মেয়র চলে যান। অবশ্য মেয়র চলে যাওয়ার পরও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও হাতাহাতি হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকও হয়।

এর ঘণ্টাখানেক পর আসিফ এবং তার কয়েকজন বন্ধু খলিফাপট্টিতে নাস্তা করতে যাওয়ার সময় আকস্মিকভাবে মোহন নামে একজন এসে আসিফকে ছুরিকাঘাত করে। এসময় তাকে বাঁচানোর চেষ্টাকালে তার এক বন্ধুও আহত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিম আজাদীকে বলেন, এ ধরনের ঘটনার কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নিব।

চমেক হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহত মহিন উদ্দিন আজাদীকে বলেন, সাইকেল চালিয়ে আমি চাকরি থেকে আসছিলাম। আমাকে দেখে একজন বলে ওঠছে, ‘এই ইয়াছিনের ভাই, তাকে ধর, তাকে মেরে ফেল’। এরপর আমাকে সাইকেল থেকে নামিয়ে মারধর করেছে। আমি আসার আগে সেখানে কি হয়েছে জানি না।

জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি থাকা মো. আসিফ আজাদীকে বলেন, ওরা ওরা মারামারি করছিল, সেটা আগে শেষ হয়ে গেছে। আমরা বন্ধুরা মিলে নাস্তা খেতে যাচ্ছিলাম। এসময় হঠাৎ একজন এসে পেছন থেকে আমাকে ধরে ফেলে। আমার কপালে এবং বুকে ছুরি মেরে দেয়। আমি তার হাত ধরে ফেলি। সেখানে আমার আরেকজন বন্ধু ছিল তার হাতেও আঘাত করে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যায়। ছুরিকাঘাত কে করেছে জানতে চাইলে বলেন, মোহন নামে একজন ছুরি মেরেছে।

আরিফ আজাদীকে বলেন, ডাস্টবিন বিতরণ শেষে শাহাদাত (মেয়র) ভাইকে বিদায় দেয়ার সময় ওনার উপস্থিতিতে টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান ভাইয়ের এক কর্মী ফারুক আমাকে পেছন থেকে থাপ্পর দেয়। শাহাদাত ভাই সেটা দেখে ব্যবস্থা নিতে বললেও মান্নান ভাই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা এর প্রতিবাদ করি। তখন তাকে নিরাপদে পাঠিয়ে দেয়। এরপর ফতেহ আলী, সাজ্জাদ এবং ফারুক আমার উপর হামলা করে। পরে ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ এবং মান্নান ভাই এটার সমাধান করবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। তখন আমি চলে যাচ্ছিলাম। এরপর সাবেরিয় গ্রেস প্লেস পর্যন্ত যাওয়ার পর সাজ্জাদ এবং আরো কয়েকটা ছেলে এসে আমার উপর হামলা করে। এরপর আমি চিকিৎসা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চলে আসি। মেডিকেলে আসার পর শুনছি ওখানে নাকি আরো একজনকে কুপিয়েছে।

এ বিষয়ে নগর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আবদুল মান্নান আজাদীকে বলেন, আরিফকে চড় মারার বিষয়ে আমরা বসে সমাধান করবে বলে আশ্বস্ত করি এবং সেখান থেকে চলে আসি। বিষয়টি নিয়ে আমরা বসতাম। কিন্তু এর মধ্যে শুনতে পাই সেখানে নাকি ছুরি মারামারি করছে। কারা করছে জানি না। তিনি বলেন, ফারুক আমার না বিএনপি’র কর্মী।

সাজ্জাদ আজাদীকে বলেন, শাহাদাত ভাই থাকতেই আরিফের সঙ্গে আমার একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল, হাতাহাতি হয়নি। এবং সেটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর আমরা নাস্তা করতে যাচ্ছিলাম। এসময় মইন এসে অতর্কিতভাবে আসিফকে ছুরি মেরে দেয়। আসিফকে বাঁচাতে চেষ্টা করার সময় তার এক বন্ধুকেও ছুরি মেরে দেয়। আরিফকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, মিথ্যা কথা। তার সাথে হাতাহাতিই হয়নি। মারলে সে আহত হত না।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাতাহাতিতে জড়ানো দুই গ্রুপের একপক্ষ নগর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আবদুল মান্নান এবং অপরপক্ষ দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি খন্দকার নুরুল ইসলামের অনুসারি বলে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেসটিনির এমডি রফিকুলসহ ১৯ জনের কারাদণ্ড, ৪৫০০ কোটি টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধপারিশ্রমিক নিয়ে অসন্তোষ রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রাম দলে