বিশ্বে আধুনিক নগর যোগাযোগ ব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ মেট্রোরেল। লন্ডনে সর্বপ্রথম এই রেলব্যবস্থা চালু হয়। এবার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। আজ বুধবার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর থেকে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর চলবে ঢাকার প্রথম মেট্রো রেল। উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশনের মধ্যে প্রতি যাত্রায় ২০০ জন করে যাত্রী বহন করবে একেকটি ট্রেন।
সব প্রস্তুতি শেষ; এখন কেবল অপেক্ষা, কখন সবুজ পতাকা দুলিয়ে মেট্রোরেলের যাত্রার সংকেত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে উত্তরা উত্তর স্টেশনে হবে এই আনুষ্ঠানিকতা। মেট্রোরেলের উদ্বোধনী যাত্রায় খোদ সরকারপ্রধান অবতীর্ণ হবেন রেলের গার্ডের ভূমিকায়। পরে সেই সবুজ পতাকায় নিজের স্বাক্ষরও তিনি রেখে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীই হবেন এ বৈদ্যুতিক ট্রেনের প্রথম যাত্রী।
মেট্রোরেলের উদ্বোধনী আয়োজন সম্পর্কে জানাতে গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান,
বুধবার বেলা ১১টায় উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। ধাপে ধাপে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুইশ জন আমন্ত্রিত অতিথিকে সঙ্গে নিয়ে মেট্রোরেলে চেপে তিনি আগারগাঁও প্রান্তে আসবেন।
উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২২ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেল দেশের যোগাযোগ ইতিহাসে নতুন সংযোজন। আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এলাকা জনগণের যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে পুরো পথ বাণিজ্যিক যাত্রার জন্য প্রস্তুত হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মাসেতুর উদ্বোধনের আদলে মেট্রোরেল উদ্বোধনের দিনও একটি সুধী সমাবেশ হবে। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে সেই অনুষ্ঠানে মেট্রোরেলের ফলকের একটি প্রতিরূপ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে পায়রা অবমুক্তকরণ ও ফায়ারওয়ার্কসের পরিকল্পনা থাকলেও সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে মোনাজাত হবে।
মন্ত্রী জানান, সুধি সমাবেশ শুরু হবে ১১টা ২৫ মিনিটে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমসিটিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় সেখানে কয়েকজন বক্তব্য দেবেন। সচিব সাহেব স্বাগত বক্তব্য দেবেন, জাপানের রাষ্ট্রদূত বক্তব্য দেবেন। এরপর সভাপতির বক্তব্য দেব আমি। ১২টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। এরপর এরিয়াল ভিউ প্রদর্শনী হবে। থিমসং পরিবেশন হবে, বলেন ওবায়দুল কাদের। সুধী সমাবেশে বক্তব্য শেষে উত্তরা উত্তর স্টেশন পরিদর্শন করবেন শেখ হাসিনা। মূল ফলক পরিদর্শন করে ফলকের পাশে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপন করবেন তিনি।
কাদের বলেন, এরপর সেখান থেকে প্ল্যাটফর্মে উঠে টিকিট মেশিন ব্যবহার করে টিকেট কিনবেন সরকারপ্রধান। সেখানে তাকে মেট্রোরেল ও প্ল্যাটফর্মগুলো সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রী সবুজ পতাকা নেড়ে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের চলাচলের শুভ সূচনা করবেন। স্মারক হিসাবে সবুজ পতাকায় স্বাক্ষর করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তার জন্য সংরক্ষিত কোচের দরজায় ফিতা কেটে ট্রেনে উঠবেন। ট্রেন তিনি আমন্ত্রিত অতিথির সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন। তারপর আগারগাঁও স্টেশনে নেমে প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে গণভবনে ফিরবেন বলে জানান কাদের।
১০ মিনিট অন্তর ছুটবে মেট্রোরেল : গতকাল ঢাকার আগারগাঁও স্টেশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, যাত্রীরা যাতে মেট্রো রেলের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়, সেজন্য শুরুর দিকে ২০০ জন করে যাত্রী নিয়ে চলবে ট্রেন। স্টেশনে ১০ মিনিট থেমে যাত্রী ওঠানামার কাজ করা হবে। যাত্রীরা অভ্যস্ত হতে থাকলে ক্রমান্বয়ে মাঝপথের স্টেশনগুলো থেকেও যাত্রী উঠানো শুরু করবে জানিয়ে এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আশা করছি মার্চের মধ্যে পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে পুরোদমে চালাতে পারব আমরা।
ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, আপাতত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে। প্রতি মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে ট্রেন চলাচল। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিদ্দিক জানান, সরাসরি চললে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড।
মেট্রোরেলের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা হারে; সেই হিসেবে প্রথম চালু হতে যাওয়া অংশে চলতে গুনতে হবে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, শুরুর দিকে ৬ কোচবিশিষ্ট ১০টি ট্রেন চলাচল করবে উত্তরা–আগারগাঁওয়ের পথে। অতিরিক্ত হিসাবে আরও দুটি ট্রেন ডিপোতে প্রস্তুত রাখবেন তারা।