গণপরিবহন হওয়ার পরও মেট্রোরেলের ভাড়া বাসের তুলনায় বেশি হওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা বিবেচনায় নিয়ে ভাড়ার এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মেট্রোরেলের নির্মাণ, তদারকি ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমসিটিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেছেন, ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আধুনিক সুযোগ–সুবিধা, বিদ্যুতের দামসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের আগের দিন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাড়ার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন ওবায়দুল কাদের এবং এম এ এন ছিদ্দিক। মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বুধবার সকাল ১১টায় মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে বিএনপির চার নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত এই চার নেতার মধ্যে রয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও মঈন খান।
কলকাতায় মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া যেখানে ১০ রুপি, সেখানে ঢাকায় তা ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে একজন সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে জানতে চান, মেট্রোরেলের মাধ্যমে সব শ্রেণির মানুষের
জন্য পরিবহন গড়ে তোলার যে স্বপ্ন, সেটা কেবল উচ্চ এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য চলে গেল কি–না। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি একটা কথা ইন–জেনারেল বলি, এখন যে অবস্থা ঢাকা সিটিতে, আপনি উত্তরা থেকে কমলাপুরে আসবেন, ১০০ টাকায়। কত মিনিটে আসছেন? ৩৮ মিনিটে। তাহলে কোথায় লস হল? প্রতিটি আনন্দের সঙ্গে যন্ত্রণা থাকে। ভাড়া একটা বিষয়, এটা কখনো জেনারেলি একসেপ্টেবল হবে না, কোথাও। কিন্তু বাস্তবে সবাই একসেপ্ট করবে। মিনিমাম রিকশা ভাড়া এখন ২০ টাকা, এটা কি ভাবেন?
মেট্রোরেলে চড়তে প্রতি কিলোমিটারে জন্য ৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকার। সেই হিসাবে দিয়াবাড়ির উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীকে গুণতে হবে ৬০ টাকা। অথচ রাজধানীতে ডিজেল চালিত বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। সব শ্রেণির মানুষকে আকৃষ্ট করার স্বার্থে মেট্রোরেলের ভাড়া কমানোর দাবি ইতোমধ্যে জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
মেট্রোরেল প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার চাপ সাধারণ যাত্রীদের ওপর এসে পড়ার কথাও তুলে ধরেছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে কেবল ভাড়ার উপর নির্ভর না করে স্টেশনকেন্দ্রিক ব্যবসা থেকে আয়ের পথ তৈরির পরামর্শ রয়েছে তাদের। ভাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আপনাকে একটু দেখতে হবে, কোন মেট্রোরেলটা কোন সময়ে হয়েছে। আপনি নিশ্চয় কলকাতার মেট্রোতে চড়েছেন, এটা কখন হয়েছে এটা একবার একটু চিন্তা করে দেখেন…। কলকাতার মেট্রোরেলের কী ফ্যাসিলিটিজ আছে এখানকার মেট্রোরেলের কী ফ্যাসিলিটিজ আছে, সেটা আপনি দেখেন। এই মেট্রোরেল কতটুকু সময় সাশ্রয়ী, সেটা আপনি একটু দেখে নেবেন। মন্ত্রী মহোদয় ইতোমধ্যে আপনাকে বলেছেন, আমরা যদি নন স্টপ আসি, মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে এই পথ চলে আসব। উত্তরা থেকে আপনি এমনি যদি আসেন, তাহলে আপনার কতক্ষণ লাগবে, এটা চিন্তা করে দেখেন।
সম্প্রতি যেসব দেশে মেট্রোরেল তৈরি হয়েছে, সেসব দেশের সাথে ভাড়ার তুলনা করার পরামর্শ দিয়ে এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, দেখবেন যে, আমরা সেই জায়গাটাতে আছি। বিদ্যুৎ বিলটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে, এটা একটা বৈদ্যুতিক ট্রেন। আপনি দেখবেন যে, যার সাথে আপনি তুলনা করবেন, সে দেশের বিদ্যুতের রেটটা কত, এই দেশের রেটটা কত? এগুলি আপনি তুলনা করে যখন দেখবেন, যেই ভাড়াটা নির্ধারণ করা হয়েছে, এটা একদম সর্বনিম্ন ভাড়া।