একেবারেই হঠাৎ বেরিয়ে পড়া চার বন্ধু–পরিবার। যাবো সুউচ্চ পাহাড়মালা, মেঘ আর বৃষ্টির শহর দার্জিলিং, বরফ আর ঝর্ণার রাজ্য সিকিম আর লাচুং। সিদ্ধান্ত নিয়েই আর দেরি নয়, ঝটপট বেরিয়ে পড়ি অজানাকে জানা আর অদেখাকে দেখার উদ্দেশ্যে।
সফরসঙ্গীদের মাঝে বন্ধু কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও তার স্ত্রী সুস্মিতা চৌধুরী রানু, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার আর তাঁর স্ত্রী জোছনা কায়সার, বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী শুভ্রা বিশ্বাস আর আমার জীবনসাথী আলোকচিত্রী ও শিল্পী মউদুদুল আলম। আমরা সকলেই একটি বন্ধুগ্রুপে জড়িত দীর্ঘসময় ধরে।
ফলে যখন বাড়ি ছেড়ে গাড়িতে উঠছিলাম, সত্যি অজানা এক শিহরণে যেন নিজের শহরকেই ভুলে যাচ্ছিলাম। ভারতে প্রবেশের জন্য আগরতলা সীমান্ত ছিল প্ল্যানে। ভারতে অনেকবার যাওয়া হলেও আমি কোনদিন আগরতলা যাইনি, তাই বেশি উচ্ছ্বাস, অনাবিল আনন্দেই ছিলাম প্রাণিত। আমরা আখাউড়া ল্যান্ডপোর্ট হয়েই আগরতলা প্রবেশ করবো। দীর্ঘ পথে কথামালা আর আড্ডার যাদুকর বিশ্বজিৎ, কথায় কথায় দুষ্টুমি আর জীবনরসে ভরা কায়সার ভাইয়ের উপস্থিতিতে আমাদের নয়দিনের ভ্রমণটি পায় অন্যরকম এক পূর্ণতা। আখাউড়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছাড়াকালে রাস্তাজুড়ে শত শত কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, করবী, জারুল আর সোনালু ফুলেরা যেন তাদের অপূর্ব সুষমা দিয়েই আমাদের বিদায় দিচ্ছিল।
নতুন পথ নতুন অঞ্চল দেখতে দেখতেই কখন যে পৌঁছে গেলাম সীমান্তের সীমারেখায় তা টেরই পেলাম না।
দুই সীমান্তের কিনারায় দাঁড়িয়ে ফটোসেশন সেরে আমরা আগরতলা প্রেসক্লাবে উঠি।
ফ্রেস হয়ে লাঞ্চ সেরে চটজলদি আগরতলা ট্রেন স্টেশনে যাই।
কি সুন্দর এই স্টেশন। সন্ধ্যা ৭ টার ট্রেনে আমরা যাত্রা করি নিউজলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ ট্রেন জার্নি। ট্রেনে কত প্রদেশের মানুষ। কতজনের সাথে পরিচয় হলো। আমরা ত্রিপুরা, আসাম, কুচবিহারসহ অনেক অঞ্চল পেরিয়ে নামলাম নিউ জলপাইগুড়িতে। স্টেশনেই দাঁড়ানো ছিল আমাদের দার্জিলিং নিয়ে যাবার গাড়িটি। সমুদ্রসমতল থেকে প্রায় সাত হাজার ফুট উচ্চতায় শৈলশহর দার্জিলিং।
মেঘের চাদরে ঢাকা স্বপ্নময় এক শহর।
প্রকৃতির অনাবিল ছোঁয়া পেতে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। সর্পিল পাহাড়ি পথ। গাড়ি চলছে পাহাড়ের কোলঘেঁষে। শিহরণজাগানিয়া যাত্রা। মুহূর্তের ভয়ডর উবে যাচ্ছে পথের সৌন্দর্য্যে। মন ভাবনায় ভরা। হৃদয়ের গভীরে অনিবার্যভাবে চলে এলেন কবিগুরু। দার্জিলিং এর দুই প্রধান শহর কালিম্পং আর মংপু। রবীন্দ্র সাহিত্যে দার্জিলিং, মংপু আর কলিম্পং–এর কথা পড়েছিলাম। এই দুই শহরে জড়িয়ে আছে কবিগুরুর অনেক স্মৃতি। কালিম্পং এর ‘গৌরিপুর নিবাসে’ কবি থাকতেন। ১৯৩৮ সালে তাঁর ৭৮তম জন্মদিন এখানেই পালিত হয়। কবি সে–বছর ২১ সেপ্টেম্বর এই বাড়িতে বসেই পাঠ করেছিলেন তাঁর ‘জন্মদিন’ কবিতাটি। মৈত্রয়ী দেবীর মংপুতে রবীন্দ্রনাথ বইটি পড়ে কিছু ধারণা আগে থেকেই ছিল। বিশ্বকবির পছন্দের জায়গায় যাচ্ছি, এতেই যেন আত্মহারা অন্যরকম এক আনন্দে। পথে পথে সারি সারি চা বাগান কেবল দার্জিলিং চা’য়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। আমরা এনজিপি মানে নিউ জলপাইগুড়ি ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে ধূলিধূসরিত কংক্রিটের শহর ছেড়ে কালিম্পং, দার্জিলিং আর গ্যংটক–এর পথে এগুতেই সবুজ গাছগাছালি আর নিঃশব্দ পাহাড়মালা যেন আমাদের দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি ভুলিয়ে দিচ্ছিল। কিছুদূর গিয়ে নেপালি দোকানির ধূমায়িত গরম চা আর মোমো খেয়ে আরেক ধাপ এনার্জি অর্জনে যেন আরো প্রশান্তি, কখন দেখবো দার্জিলিং। তো ছয়/সাত হাজার ফিট উপরে উঠছি তো পাহাড়ঘেঁষে আঁকাবাকা পথে, কেবল উঠছি তো উঠছি, যদি পেছন ফিরে না তাকাতাম বুঝতেই পারতাম না আমরা কত উপরে উঠছি। মায়াবী শৈলমালার অনাবিল হাতছানি। মনে হচ্ছে এক্ষুনি পাহাড় ছোঁব! কিনু্ত না কাছে এসেও পাহাড়মালা যেন আরো উঁচুতে আহ্বান করছে। উঠতে উঠতেই একেবারে মেঘের রাজ্যে, মেঘ ছুঁয়ে যাচ্ছিল আমাদেরকে।
পাহাড়গুলোর নাম জানি না, কিন্তু আমার রামগিরি আর অলকাকে মনে পড়েছিল, মেঘদূতের যক্ষপ্রিয়াকে মনে পড়ছিল। এই মেঘেরাই দূত হয়ে গিয়েছিল যক্ষের বার্তা নিয়ে তার প্রিয়ার কাছে। কল্পনার পাখায় উড়াল দিতে দিতেই দার্জিলিং–এর রূপ শোভা পাচ্ছিল। খাড়া পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বাড়িগুলি নির্মিত ভিন্ন অদলে। মিস্টি গোলাপী বাড়ি, আর ফুলের শোভা কাকে বলে এখানে না এলে বোঝা যাবে না। পাহাড়ের গায়ে গায়ে ছোট ছোট ঝরণা, শহরের রাস্তা কোথাও উঁচু আবার কোথাও নীচু। মেঘের কণা ভেদ করে আঁকাবাকা পথের ধারে ছবির মতো এক জনপদ দার্জিলিং এসে আমরা হোটেল ক্যাপিটাল–এ উঠলাম। চটপট চেক ইন করে যার যার রুমে গিয়ে মালছামানা রেখে বেরিয়ে পড়ি মেঘেররাজ্য দার্জিলিং দেখার উদ্দেশ্যে। আমাদের হোটেলের সামনেই বিশাল মল। পাহাড়ি আমেজ। একবার নামছি তো আবার উঠছি। অসম্ভব ভিড়, কত দেশের পর্যটক। কেউ কেনাকাটায় ব্যস্ত , কেউবা স্ট্রিটফুড খাচ্ছে। নেপালী মেয়েরা খাবার বানাচ্ছে, চলছে বিকিকিনি।
দোকানের দু’পাশে গরম কাপড়ের জমজমাট বেচাকেনা। চাউমিন আর মোমোর ঘ্রাণে স্বাদটা জিভে এসে লাগলেও সময়ের অভাবে খাওয়া হয়নি। মল ঘুরে উঠতে উঠতে পাহাড়চূড়ায় এক চত্বরে এলাম। আলোআঁধারি এ চত্বরে মঞ্চ, বসার সিট, চা–কফির ব্যবস্থা আছে। মঞ্চের সামনে নেপালী কবি ভানু ভক্তের বিশাল মূর্তি। আমাদের সঙ্গী যুগল কবির সাথে ভানুভক্তের সাথে ফটোসেশন করেই আমরা তরতর করে নেমে এলাম ডিনারের উদ্দেশ্যে ‘এসো বসো আহারে’ রেস্টুরেন্টে। বাঙালি খাবারের সাথে বাঙালি আমেজ, সমানে বাজছে সব বাংলা গান, গান শুনতে শুনতেই রসনা তৃপ্ত। ছুটে গেলাম হোটেলে, কারণ রাত ৩ টায় গাড়ি আসবে আমাদেরকে টাইগার হিলে নেয়ার উদ্দেশ্যে।
এদিকে দার্জিলিং–এর আকাশ মেঘের চাদরে ঢাকা। মেঘেরা উড়ে–উড়ে ঘুরে–ঘুরে হোটেলের করিডোরে এসে কবাট আর খিড়কি ভেদ করে রুমে প্রবেশ করছিল। বৃষ্টি আর মেঘের দোর্দণ্ড প্রতাপে কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্যোদয় দেখার আশা ম্লান হতে লাগলো। তবুও রাত তিনটায় মেঘের আবরণ ভেদ করে ঠাণ্ডায় হিম হতে হতে টাইগার হিলে পৌঁছি। শত শত পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার বাসনায় মেঘের রাজ্যে ভিড় করেছে। আমরা প্রকৃতি অপার সৌন্দর্য দেখার আশায় বিভোর ! তাকিয়ে আছি কখন দেখবো সূর্যের সাতরঙা ঝিলিক! না, আশায় গুঁড়েবালি, ঘন কালো মেঘ আমাদের এতো বেশি ভালবাসে জানতাম না। সে আমাদের থেকে একটুও সরলো না। মায়াবী চাদর তো সরলোই না, বরং গভীর থেকে আরো গভীর হলো। এভারেস্ট–এর ধবল বরফচূড়ার সূর্যের রং–এর খেলা না দেখেই ফিরে এলাম গাড়িতে। পথে পিস প্যাগোডা আর জাপানি বৌদ্ধমন্দির ঘুরে দার্জিলিং এসে ব্রেকফাস্ট সেরে সাইড সিনে বেরিয়ে পড়লাম। মনাস্ট্রি, রক গার্ডেনে বিশাল জলপ্রপাতের কলকল ধ্বনি যেন কান পাতলেই শুনছি। পাহাড়ের চূড়া থেকে ঝিকঝাক পথে অনেক নীচে নেমে রক গার্ডেন এর দেখা পেলাম। প্রবেশকালে ঝুপড়ি দোকানে গরম গরম মোমো, চাউমিন আর দার্জিলিং চা পানে যেন শরীর ওয়ার্ম আপ হলো কিছুটা। তাই ক্লান্তি ভুলে গিয়ে জলপ্রপাতের ছলছল উচ্ছলতায় নিজেরা মেতে উঠলাম। পাথরের পাহাড় ঘেঁষে ফুলের বাগান। চারিদিকে বিশাল পাহাড় দাঁড়িয়ে যেন এক শৈলবেষ্টনী নির্মাণ করেছে। এই অভূতপূর্ব দৃশ্যপট দেখে পলকে পলকে বিস্মিত হচ্ছিলাম। তাদের ঐতিহ্যবাহী রাণীর পোশাক পরে রাণীও সেজেছিলাম। রক পার্ডেন থেকে ফিরে চা বাগান এবং রডোডেনড্রন বাগান দেখে আবার দার্জিলিং ফিরে পরের দিন সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু।
সিকিম যাত্রাকালে সারা পথ জুড়েই আমাদের ছায়াসঙ্গী ছিল তিস্তা নদী। উত্তর সিকিমের ছোলামু লেক থেকে এর উৎপত্তি। তিস্তার পান্না সবুজ জল বেশ কিছু এলাকায় ছোট–বড় পাথরে ভরা । কোথাও একেবারে কিশোরীর বেণীর মতো, কোথাও বা ছলছল খলখল গতিতে চলেছে আপন গতিতে যেন তার ভরা যৌবন। যাত্রাপথে অভয়ারণ্য, গাছের ছায়া, মেঘের মায়া আর অজস্র ফুলের মেলা। পাহাড়ের গা ঘেঁষে চলতে চলতে তিস্তাও এঁকেবেঁকে চলেছে অমাদের পিছু পিছু। কোথাও সে শান্ত স্নিগ্ধ, কোথাও বা অল্প পান্না সবুজ জলে ছোট–বড় পাথরের নেকলেস পড়া কিংবা গলায় বাঁধের শৃঙ্খল বেষ্টিত স্থির ঘোলা জলে বন্দী। এই তিস্তাকে সাথী করেই তিস্তাবাজার হয়ে আমরা সেতু পার হয়ে সিকিম চেকপোস্ট রংপুতে পৌঁছি।
বিশু আর রানু পারমিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই আমরা গাড়ি থেকে খানিকটা নেমে তিস্তাপাড়ে গেলাম। এখানে জল কম, কিন্তু ভীষণ খরস্রোতা, পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে স্ফিত জলরাশির খলখল ছলছল মূর্চ্ছণায় অভিভূত ছিলাম। পারমিশন পেয়ে আবার যাত্রা গ্যাংটকের পথে। সিকিমে পলিথিন, প্লাস্টিক কড়াকড়িভাবেই নিষিদ্ধ। একেবারেই নিরিবিলি নিঃশব্দ পথচলা। বিকাল ৩টা নাগাদ আমরা গ্যাংটকে পৌঁছে উঠলাম হোটেল ইনোরিতে। চমৎকার পরিবেশ। চেক ইন করে যার যার রুম বুঝে নিয়ে খাবারের অর্ডার দিয়ে উদরপূর্তি হলো। ইনোরির সুন্দর লবিতে বসে বিকেলে আড্ডা দিয়ে আমরা গেলাম গান্ধী মলে। ফিরে এসে রাতের খাবার খেয়ে পরের দিন লাচুং যাবার কথা। কিন্তু পারমিট না পাওয়ায় আমরা আরেকদিন থাকলাম গ্যাংটকে, ইনোরিতে নয়, অন্য একটি হোটেলে।
সেদিন বিশাল জলপ্রপাত দেখলাম, মেঘ ভেদ করে ছুটছি, জলপ্রপাত–এ আবার সিকিমের ড্রেস পড়ে ফটো সেশন, রডোডেনড্রন গার্ডেন দেখে বিশাল মনাস্ট্রি ঘুরে হোটেলের কাছে এসে দুপুরের খাবার খেলাম। পরের দিন যাত্রা লা্চুং এর পথে। পাহাড়ি পিচঢালা পথ, পাথরের পাহাড়ে ফুলের প্রলেপ, ফুল আর ফুল, প্রকৃতি এখানে আরেকরকম সুন্দর রচনায় ব্যস্ত। চারিদিকে সুউচ্চ পর্বতমালা, আর এভারেস্ট ঘেরা গ্রাম উত্তর সিকিমের লাচুং পথে নেপালী বুড়ির রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবারশেষে আবার যাত্রা। যতই এগুচ্ছি শীত একটু একটু করে কড়া নাড়ছে।
সন্ধ্যা নাগাদ লাচুং–এর পাইন হোটেলে উঠলাম। শীত আর ঠাণ্ডায় প্রায় কাবু হয়ে কোনরকমে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম। অসংখ্য ঝর্ণার শোঁ শোঁ গর্জন কানে বাজছিল। ঠাণ্ডা যতই বাড়ছিল, জলপ্রপাতের গর্জন ততই স্তিমিত হয়ে আসছিল, কারণ সেই প্রবল স্রোতধারা তখন বরফ হয়ে স্তব্ধ হয়ে রইলো
লাচুং চীন সীমান্তের সীমারেখায়। এর পরেই চীন দেশ। পরের দিন ভোরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম আরো উঁচুতে ইয়ামথুং ভ্যালি দেখার উদ্দেশ্যে। প্রায় ১৩ হাজার ফিট উঁচুতে এই ভ্যালি পর্যটকদের নজর কাড়ে। সারা পথে রডোডেনড্রন গুচ্ছ, অসংখ্য বরফ আচ্ছাদিত ঝর্ণা,পাথর আর ফুলের মেলা। ইযাংথুম ভ্যালি থেকে আরো তিন হাজার কিলোমিটার উঁচুতে জিরো পয়েন্ট। সেখানে যাওয়া বাতিল করে আমরা ইয়াংথুম ভ্যালিতে আসি। পাহাড় থেকে অনেক নীচে এই উপত্যাকা। সেখানেও তিস্তা নদী পাথর নিয়ে খেলায় মগ্ন। প্রকৃতি এক অপার লীলা। উপত্যকায় ইয়করা ঘুরে ঘুরে বুনো ঘাস, লতাপাতা খাচ্ছে। এই এলাকা ইয়কের জন্য বিখ্যাত। ইয়াংথুম ভ্যালি থেকে দেখা যাচ্ছে বরফাচ্ছাদিত এভারেস্টচূড়া।
ইয়াংথুম ভ্যালি থেকে হোটেলে এস প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আমরা প্রায় সকাল ১০ টায় দুপুরের খাবার খেয়ে হোটেল চেক আউট করে যাত্রা করি গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে। এই সুন্দর গ্রামটি ছেড়ে আসতে কিছুতেই মন চাচ্ছিল না। এমন নিস্তব্ধ আর নির্জন সৌন্দর্যে বিভোর না হয়ে উপায় নেই। মানুষগুলোও প্রকৃতির মতোই শান্ত আর নির্মল।
যেই অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভাকে দেখে মুগ্ধ হতে হতে পথ পাড়ি দিয়েছিলাম, ফেরার পথে আবার সেই সুন্দরকে চেতনার গভীরে ধারণ করে ফিরছিলাম। সেই ছোটবড় জলপ্রপাত, সেই পাথুরে নদী তিস্তা, সেই রকমারি বুনো ফুলের পল্লবিত শোভা, সেই বরফ গলা নদী, মেঘ আর পাহাড়ের বেষ্টনি ভেদ করে ফিরে এলাম আবার গ্যাংটকে। সারাদিন গাড়িতেই গেল, সন্ধ্যা নাগাদ এসে উঠলাম হোটেল রঘুথাম লা ই্য়ুল এ। চমৎকার হোটেল দেখে পথের ক্লান্তি নিমেষেই মুছে গেলো। বিশাল লবি। রুমের জানালা দিয়ে সিকিম নগরীর শোভা, অন্যরকম দৃশ্যপট। একটু বিশ্রাম নিয়ে, রানু আর জোছনা গেলাম লালবাজারে শপিং করার জন্য। হাতে সময় কম, এখানে রাত ৮ টায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। লালবাজার আমাদের রিয়াজুদ্দীন বাজারের মতো, কঁচাবাজার থেকে শুরু করে সবই আছে। তেমন কেনাকাটা হয়নি, একটু ঘুরেই হোটেলে ফিরলাম। সকালে আমাদের যাত্রা সরাসরি শিলিগুড়ি। দীর্ঘপথ। তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
কড়া রোদ উঠলো। গাড়ি আসতে খানিকটা দেরি হলো। প্রায় ১১ টা নাগাদ আমরা গ্যাংটক থেকে বিদায় নিয়ে যাত্রা করলাম শিলিগুড়ির পথে। একেবারে বিকেলে শিলিগুড়ি পৌঁছে সন্ধ্যা ৬ টায় কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথে রাতের খাবার সেরে নিই। খুব ভোরে কোলকাতা নেমে সরাসরি এয়ারপোর্টে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে হাল্কা নাস্তা সেরে কোলকাতা টু চিটাগাং ইউএস বাংলা ফ্লাইটের অপেক্ষায় থাকি।
ডিউটি ফ্রি শপে ঘোরাঘুরি, কেনাকাটা আর কফি পান করেই নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাই করে দুপুরেই চট্টগ্রাম পৌঁছে যাই। চেকিং শেষে বাইরে এসে আমরা চার পরিবার ফিরে আসলাম নিজ নিজ আবাসে। স্মৃতির ঝাঁপিতে অতি যত্নে তুলে রাখলাম রাশি রাশি আনন্দমুহূর্তগুলোকে। ঘরে প্রবেশ করেই মনে হলো, “কি পাইনি, তার হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী।”