ক্যালিফোর্নিয়ার আগুনে এখনও পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পালিসাডেসে হাজার হাজার একর জমি পুড়ে গিয়েছে। ওই অঞ্চল ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে নির্দেশ দিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের দমকল বাহিনী। এলাকা খালি করার জন্য আগেই সতর্ক করেছিল তারা। এবার নির্দেশিকা জারি করে সকলকে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সাধারণত বছরের এই মৌসুমে দাবানল দেখা যায় না ক্যালিফোর্নিয়ায়। জুন–জুলাইয়ের দিকে দাবানলের ঘটনা ঘটে। তবে এবার কী কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আগুনের উৎস জানার চেষ্টা চলছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও অজানা। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, ১২ হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রচুর বাড়ি–ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর শত শত মানুষ ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গতকাল শনিবার এসেছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে। নিজেদের ঘরবাড়ির কী অবস্থা, তা দেখতে এসেছিলেন তারা। বেশির ভাগই হতাশ হয়ে ফিরেছেন। বিমার টাকা পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়েও আশঙ্কায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা।
দাবানল নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে কারাবন্দিরাও : বিডিনিউজ জানায়, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার নজিরবিহীন দাবানল নিয়ন্ত্রণে দমকল বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন প্রায় এক হাজার কারাবন্দি নারী–পুরুষও। ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের (সিডিসিআর) নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে চলা স্বেচ্ছাসেবী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এসব বন্দিকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালিত ৩৫টি ফায়ার ক্যাম্প রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে কারাবন্দিদের দমকলকর্মী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি ক্যাম্প শুধু নারীদের জন্য। এসব ক্যাম্পে ‘বন্দি–দমকলকর্মীর’ সংখ্যা এক হাজার ৮৭০ জন। ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হওয়া বন্দিরা মূলত এসব ক্যাম্প থেকেই আসা। তারা দাবালন নিয়ন্ত্রণে কমলা রঙের ‘জাম্পসুট’ পরে ক্যালিফোর্নিয়ার পেশাদার দমকলবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন। কারাবন্দি দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এবং ধংসস্তূপ সরানোর জন্য দিনরাত কাজ করছেন।
১৯৪৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই স্বেচ্ছাসেবী প্রকল্প নিয়ে অনেক বিতর্কও আছে। অনেক সমালোচক একে শোষণমূলক উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেন। অনেকে আবার একে দেখেন সংশোধনাগার হিসেবে। ‘বন্দি–দমকলকর্মীরা’ দৈনিক ৫ দশমিক ৮০ থেকে ১০ দশমিক ২৪ ডলার মজুরি পান। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে কাজ করার সময় দৈনিক এক ডলার করে অতিরিক্ত পান তারা।
লস অ্যাঞ্জেলেসের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হল প্যাসিফিক প্যালিসাডেস এবং আল্টাডেনা। এখানে প্যারিস হিল্টন, অ্যান্থনি হপকিন্স, বিলি ক্রিস্টালের মতো বহু হলিউড তারকার বাসভবন রয়েছে। সেগুলোও আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে। ১ লাখ ৮০ হাজার বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারন বাস জানিয়েছেন, নজিরবিহীন ঘটনা। এ রকম আগে কোনও দিন দেখেননি।
‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে একটি আপদকালীন তহবিল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সকলকে নিজের সামর্থ্য মতো সেখানে অনুদানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন হিল্টন। তিনি নিজেও ১ লাখ ডলার ওই তহবিলে দান করেছেন।