সীতাকুণ্ড পৌরসদরের পন্থিছিলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার। গত সোমবার রাত ৮টার দিকে তার স্ত্রী আলেয়া বেগম (২৭) একাই পাশের গ্রামে এক বিয়ে অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে একটি সাপ তাকে কামড়ে দেয়। বিষয়টিকে তিনি অতটা গুরুত্ব না দিয়ে বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেন ও সেখানে খাওয়া–দাওয়া সেরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘরে ফিরে আসেন। পরে সাংসারিক কাজ–কর্ম সেরে প্রতিদিনের মতো স্বামী, সন্তান নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় তার কাছে কোনো কিছু অস্বাভাবিক মনে হয়নি। সাপে কামড়ে দেওয়ার বিষয়টিও তিনি আর কাউকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে অনুভব করেন মাথা কিছুতেই তুলতে পারছেন না। অন্যরা ধরে বসিয়ে দিলেও দেখা যায় মাথা সামনের দিকে ঢলে পড়ছে। এ অবস্থা দেখে স্বামী কি সমস্যা জানতে চাইলে তখন তিনি আগের রাতে সাপে কামড়ে দেয়ার কথা প্রকাশ করেন। তখন তড়িঘড়ি করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সীতাকুণ্ড সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. নুরউদ্দিন রাশেদ জানান, রোগীকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন তার অবস্থা ছিল শেষের দিকে। রোগীর চোখের পাতা দিয়ে মণি ঢেকে যাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব, ঘাড়–মাথা সামনের দিকে ঢলে পড়া– এসব লক্ষণ দেখেই নিশ্চিত হলাম এ রোগীকে বিষধর সাপে কামড়ে দিয়েছে। এ রকম লক্ষণ থাকলে এন্টিভেনম দেওয়া বাধ্যতামূলক। রোগীর অবস্থা ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছিল। তাই চিকিৎসকরা দ্রুততার সঙ্গে এন্টিভেনম প্রয়োগ শুরু করে দেন।
তিনি বলেন, সব দেখে–শুনে তাকে যে সাপে কামড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে স্থানীয় ভাষায় সেটির নাম কেউটে। এটি বিষাক্ত সাপ। এর কামড়ে ২৭ বছরের একটি তাজা প্রাণ চোখের সামনে ঝরে যাচ্ছে। অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে চিকিৎসক টিম আগাতে লাগলো। রোগীর স্বজনদের আহাজারি সহ্য করার মতো নয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার যুদ্ধ শেষে রোগীর শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে বাঁক নিতে শুরু করে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন চিকিৎসকরা।
তিনি সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রুমানা আফাজ আইরিন, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডা. খুদাদাদ মোহাম্মদ জুবায়দুল হুদা, মেডিকেল অফিসার ডা. জোয়াইরিয়া শারমিন বন্যা, ডা. সাঈদুল হক, ডা. দীপ্ত দত্ত, উপ–সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিবেকানন্দ চক্রবর্তীকে তাদের প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান।