নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন সুপারিওয়ালাপাড়ায় কিশোরী ধর্ষণ ঘটনার মূল আসামি ধর্ষক চান মিয়া চান্দুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর আদালতে হাজির করা আসামি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ খায়রুল আমীনের আদালতে ১৬৪ ধারায় আসামি জবানবন্দি দেয়। এরআগে গতকাল সকালে পতেঙ্গার খালার বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মাত্র এক হাজার টাকার বিনিময়ে সেই দুঃসম্পর্কের ফুফাত বোন তার বান্ধবী নুরীর মাধ্যমে ওই কিশোরীকে ধর্ষকের হাতে তুলে দিয়েছিল। আসামির দেয়া জবানবন্দিতে ঘটনার অন্যান্য আসামির সাথে উম্মে হানি স্মৃতি(১৭) নামে সেই ফুফাত বোনের সম্পৃক্ততার কথা উঠে এসেছে। এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে পুলিশ সেই ফুফাতো বোনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল চান মিয়ার চান্দুর সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন সোমবার সকালে নুরী তাকে (চান্দুকে) এধরনের একজনকে নিয়ে আসার কথা বলে। বিকেলে স্মৃতি ও নুরী মিলে ওই কিশোরীকে নিয়ে চান্দুর সুপারিওয়ালা পাড়া বাসায় যায়। পরে একটি কক্ষে ভিকটিমকে রেখে স্মৃতি চলে যায়। এসময় চান্দু স্মৃতিকে এক হাজার টাকা দেয়। এদিকে ওই কিশোরীর সোনার চেইন ও মোবাইল কেড়ে রেখে দেয় নুরী।
চান্দুকে গ্রেপ্তারের পর ডবলমুরিং থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপ কমিশনার ফারুক উল হক বলেছেন, পতেঙ্গার এয়ারপোর্ট এলাকার তার আত্মীয়ের বাসা থেকে চান মিয়া চান্দুকে গ্রেপ্তার করা হয়। চান্দু এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এতে বলা হয়, গত রোববার রাতে ডবলমুরিং থানাধীন সুপারিওয়ালা পাড়ায় ফুফাত বোনের বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী। ওই ঘটনায় কিশোরীর মায়ের দায়ের করা মামলায় পুলিশ ফুফাত বোনের বান্ধবী নুরী (২০), তার স্বামী অন্তর হোসেন (২৪) ও রাজিব হোসেন (২০) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। তদন্ত সূত্রে জানা যায়, চান্দুর চার তলা বাড়িতে ভাড়া থাকে নুরী ও তার স্বামী। নুরীও অসামাজিক কাজে লিপ্ত। এর ধারাবাহিকতায় ওই কিশোরীকে চান্দুর হাতে তুলে দেয় নুরী।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী থেকে আগ্রাবাদ এলাকায় চাচার বাসায় বেড়াতে আসে নোয়াখালীর একটি স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ভিকটিম কিশোরী। এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন বিকেলে কিশোরী (ভিকটিম) ফুফাত বোনের সাথে আগ্রাবাদে তার মামার বাসায় বেড়াতে যায়। পথে ফুফাত বোনের বান্ধবী নুরীর সাথে তাদের দেখা হয়। তখন নুরীর নতুন বিয়ে হয়েছে জানিয়ে এসময় তার স্বামীকে দেখার জন্য তাদের সুপারিওয়ালা পাড়ার বাসায় যাওয়ার অনুরোধ করে। পরে রিঙায় করে সুপারিওয়ালাপাড়ার উদ্দেশে রওনা হয় তারা। এরপর একই এলাকার আরেকটি বাসায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকে থেকে ওঁৎ পেতে ছিল ধর্ষক চান মিয়া চান্দু, নুরীর স্বামী অন্তর ও রাজীব হোসেন নামে আরেক যুবক। এক পর্যায়ে ওই কিশোরীকে একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে চান মিয়া চান্দু। ধর্ষণের পর ওইদিন রাত সাড়ে ৯টায় কিশোরীকে তার চাচার বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর বাসার লোকজনদের ঘটনাটি খুলে বললে ওই কিশোরীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, ধর্ষক চান মিয়া চান্দু সুপারিওয়ালাপাড়ার বাদশা সওদাগর বাড়ির মৃত আলী আজগরের ছেলে। নুরী বন্দর থানাধীন ফকিরহাট এলাকার মৃত মো. বশিরের মেয়ে । তার স্বামী অন্তর কুমিল্লা দেবিদ্বার থানার মৃত মো. মালেকের ছেলে। রাজীব কুমিল্লা দাউদকান্দির কামাল হোসেনের ছেলে।