মুহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী : লোকসাহিত্য গবেষক

| শনিবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী (১৯৫২২০২০)। গবেষকপ্রাবন্ধিক। লোকসাহিত্য ও অবলুপ্ত পুথি সংগ্রহ কর্মে হাতেগুনা যে কজনের নাম জানা যায় মুহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী তাদের একজন। ইসহাক চৌধুরী ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে জুন পটিয়া দক্ষিণ হুলাইন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা পুথিগবেষক ও সংগ্রাহক আবদুস সাত্তার চৌধুরী, মাতা ছবিলা খাতুন। ইসহাক চৌধুরী ছিলেন আপাদমস্তক একজন লোক সাহিত্যের গবেষক। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি ব্যয় করেছেন গবেষণায়। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মময় জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি কখনোই বিচ্যুত হননি পুথি ও লোকসাহিত্য গবেষণা থেকে। তাঁর আবাসস্থল যেন এক গবেষণার আকর। তার সংগৃহীত পুথি ও দলিল দস্তাবেজ বিশিষ্ট পুথিবিশারদ আব্দুস সাত্তার চৌধুরীর নামানুসারে ‘সাত্তার চৌধুরী পুথিশালা’য় সংরক্ষিত রয়েছে। প্রসঙ্গত এ পুথিশালায় পরিদর্শন করেছেন, গবেষণা করেছেন দেশ বিদেশের প্রখ্যাত ফোকলোর গবেষকগণ। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় স্থানীয় লড়িহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

এরপর হাবিলাসদ্বীপ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় হয়ে বোয়ালখালী কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমানে সরকারি) থেকে এসএসসি, হুলাইন ছালেহ নুর কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। তিনি কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে হাটহাজারী লালিয়ারহাট সিনিয়র মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। গবেষণা ও লোকসাহিত্যের প্রতি ছিলো তাঁর প্রবল আগ্রহ। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুষ্প্রাপ্য বিভাগে বিবলিও গ্রাফার হিসেবে যোগ দেন। তিনি পাণ্ডুলিপি ছাড়াও বহু পুরোকীর্তি সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে সমৃদ্ধ করেছেন। একজন ফোকলোরিস্ট হিসেবেও দেশ বিদেশে রয়েছে তাঁর বিশেষ খ্যাতি। মুহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী সংগৃহীত পবিত্র কোরআনের পাণ্ডুলিপি প্রায় অর্ধশতাধিক। যার মধ্যে সর্বপ্রাচীন ১০৯৫ হিজরী ও ১০৯৪ হিজরী সনের মোগল যুগের।

১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদস্থ ফকিরতাকিয়া থেকে ফার্সি হরফে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নামঙ্কিত একটি প্রাচীন শিলালিপি আবিষ্কার করেন যা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। গবেষণার পাশাপাশি তিনি প্রায় ৪ শতাধিক প্রবন্ধের রচয়িতা। তবে অত্যন্ত দুখের বিষয় তিনি তার এ প্রবন্ধ সম্ভার মলাট বন্দি করতে পারেন নি। তাঁর কোনো প্রকাশিত গ্রন্থ নেই। তাঁর কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি মাসিক তরজুমান ‘লেখক সম্মাননা’১৯৯৯, মালঞ্চ’ লেখক সম্মাননা ও সংবর্ধনা২০০৩,‘প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম সাহিত্য একাডেমি, বাংলাদেশ’ লেখক সম্মাননা২০০৭, জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা২০১৭ ‘সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক’২০১৮, সহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননার মাধ্যমে সম্মানীত হয়েছেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধনিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা চাই