মুনীর চৌধুরী (১৯২৫–১৯৭১) শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্যসমালোচক। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে নভেম্বর মানিকগঞ্জ শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলায়। পিতার নাম খানবাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বি.এ অনার্স ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় এবং ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। খুলনার ব্রজলাল কলেজ (বি.এল কলেজ)-এ অধ্যাপনার মাধ্যদিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।
পরে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ এবং শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। মুনীর চৌধুরী শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে বামপন্থী রাজনীতি ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারির হত্যাকাণ্ডে প্রতিবাদ করার অভিযোগে নিরাপত্তা আইনে সরকার তাঁকে বন্দি করে। জেলে বন্দী অবস্থায়ই তিনি ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় রচনা করেন তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক কবর (১৯৫৩)। মুনীর চৌধুরী সাহিত্যচর্চার প্রথম জীবনে তিনি বেশ কিছু ছোটগল্প রচনা করেছিলেন, কিন্তু সেগুলি সংগৃহীত হয়নি। তাঁর প্রধান আকর্ষণ ছিল নাটকের প্রতি। নাটকের মধ্যে আবার একাঙ্কিকার প্রতিই তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি। ছোটগল্পের মতো তাঁর অধিকাংশ একাঙ্কিকারই বিষয় সমকালীন সমাজজীবনের বৈষম্য ও বিকার। এসব একাঙ্কিকার মধ্যে বারোটি সংকলিত হয়েছে কবর, দণ্ডকারণ্য এবং পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য গ্রন্থে।
তাঁর গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে– রক্তাক্ত প্রান্তর : চিঠি, দণ্ডকারণ্য, পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য, মানুষ, নষ্ট ছেলে, রাজার জন্মদিন। অনুবাদ নাটক : কেউ কিছু বলতে পারে না, রূপার কৌটা, মুখরা রমণী বশীকরণ, প্রবন্ধ গ্রন্থ : ড্রাইডেন ও ডি.এল. রায়, মীর মানস, তুলনামূলক সমালোচনা, বাংলা গদ্যরীতি। মুনীর চৌধুরী মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র মাধ্যমে নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর একটি বিশেষ কীর্তি বাংলা টাইপ রাইটারের কি–বোর্ড (১৯৬৫) উদ্ভাবন, যা ‘মুনীর অপটিমা’ নামে পরিচিত। তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২) ও দাউদ পুরস্কার (১৯৬৫) লাভ করেন। ঢাকার থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী তাঁর স্মরণে মুনীর চৌধুরী সম্মাননা (১৯৮৯) পদক প্রবর্তন করে। ১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দুদিন আগে ১৪ ই ডিসেম্বর তিনি অপহৃত ও নিহত হন।