মুণ্ডুহীন দল বিএনপি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় : প্রধানমন্ত্রী

| মঙ্গলবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন রুখতে বিএনপি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক থেকে অতীতের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার বিকালে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে বর্ণনা করেন নেতৃত্বহীন দল হিসেবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়ে একটা বিষয় নজরে রাখতে হবে। বিএনপিজামায়াত জানে, ২০০৮ সালেই ৩০টি সিট পেয়েছে। তারা জানে যে, তাদের নেতা নেই। মুণ্ডুহীন একটা দল। একটা পলাতক আসামি (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান), একটা কারাগারের আসামি (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া)। সেই দল এই দেশের নির্বাচন হতে দিতে চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি ওই গাড়ি আর মানুষকে আগুনে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন। উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন। যেন আর কেউ সাহস না পায় মানুষকে এভাবে ক্ষতি করতে। খবর বিডিনিউজের।

জনগণের জানমাল রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে থেকে সহযোগিতা করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি দেখেছি সেই পোড়া মানুষগুলোর দুরবস্থা। চোখে পানি রাখা যায় না। ওদের (বিএনপি) মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ নেই। কীভাবে পুলিশকে হত্যা করেছে, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। ওই ধরনের ঘটনা যাতে আর ঘটাতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি এলাকায় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা, আপনারা মানুষের নিরাপত্তা দেবেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে আপনারা নিরাপত্তা দেবেন।

নৌকা দেবে স্মার্ট বাংলাদেশ : ২০৪১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই দেশ স্মার্ট বাংলাদেশের রূপ পাবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই নৌকাই দেবে ৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, স্মার্ট অর্থনীতি হবে, স্মার্ট সমাজ হবে। বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হবে, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করে আমরা তৈরি করব। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারো সেবা করার সুযোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনতার কাছে ভোট চাইলে তারা দুই হাত তুলে নৌকায় পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান।

বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড : বিএনপি সন্ত্রাসী দল এবং তাদের কোনো মনুষ্যত্ব নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কাজ হলো আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা। ২৮ অক্টোবর কীভাবে পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে। ৪৫ জন পুলিশকে আহত করেছে। সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করেছে, তাদের পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রাজারবাগে হাসপাতালে হামলা করেছে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের ওপর হামলা করেছে। এদের মধ্যে এতটুকু মনুষ্যত্ব নেই। অন্তঃসত্ত্বাসহ অ্যাম্বুলেন্সে পুড়িয়ে দিয়েছে। যা তারা শুরু করেছিল অতীতে। নির্বাচন বন্ধ করতে তখন হাজার হাজার স্কুল পুড়িয়েছিল, সরকারিবেসরকারি অফিস পুড়িয়েছিল, কিন্তু নির্বাচন বন্ধ করতে পারেনি। জনগণ বাধা দিয়েছে। তারা সফল হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, ওই সন্ত্রাসী দল বিএনপিজামায়াত জোট, তারা মানুষের জন্য কাজ করে না। একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে কারাগারে। আর একজন মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করবে না বলে লন্ডনে বসে দুর্নীতির টাকা দিয়ে চলছে। তার এখানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। ফিলিস্তিনে বর্বর ইসরায়েল যেভাবে হাসপাতালে হামলা করেছে, বিএনপিও একই কায়দায় হাসপাতালে হামলা করেছে। তিনি বলেন, বিএনপিরা ইসরায়েলের কাছ থেকে মনে হয় শিক্ষা নিয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি বাংলাদেশ চায়? নাকি ধ্বংস চায়? ওরা বাংলাদেশের ধ্বংস চায়।

পোশাক শ্রমিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন : বক্তব্যের এক পর্যায়ে বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক কর্মীদের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া কোন সরকার তাদের বেতন বাড়িয়েছে? জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ তাদের বেতন বাড়ায়নি। বিএনপির সময়ে যে বেতন ছিল ৮০০ টাকা, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তা ১৬০০ টাকা করেছিল। এরপর কয়েক দফায় তা বাড়িয়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা, ৫ হাজার ৩০০ টাকা, ৮ হাজার ২০০০ টাকা, সর্বশেষ ১২ হাজার ৫০০ টাকা করেছে। কোন সরকার এভাবে কাজ করেছে? যদিও বেসরকারি খাত, এরপরও মালিকদের বুঝিয়ে তা করেছি। সরকারি কর্মচারীদের বেতন মাত্র ৫ ভাগ বাড়িয়েছি। আর গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন ৫৬ ভাগ বাড়িয়েছি। তাহলে তাদের আপত্তি কোথায়? আন্দোলনকারীদের কারা উসকানি দিচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেজন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মাধ্যমে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলার মানুষ আমার পরিবার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে মাবাবা হারিয়ে বাংলার মানুষকে নিজের পরিবার মনে করে তাদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বারবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আমার চাওয়ার কিছু নাই। মা বাবা সব হারিয়েছি। তবুও আমি ফিরে এসেছি। যে মানুষগুলোর জন্য, মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন, আমি তাদের ভাগ্য গড়তে চাই। ক্ষুধা দারিদ্র দূর করে উন্নত জীবন দিতে চাই। দেশের মানুষ ভালো থাকলে এটাই আমার পাওয়া।

খুলনার জন্য উপহার : এবারের খুলনা সফরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ২৯টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। খুলনাসহ দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, খুলনার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। আজ যা উদ্বোধন করলাম তা আপনাদের জন্য উপহার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৯০ বিদ্যালয়ে নতুন একাডেমিক ভবন, ব্যয় ১০৬ কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধ১২-১৪টি হ্যান্ডেল ক্লিপ ও নাট বল্টু খোলা যে কারণে