পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মুখে মধু অন্তরে বিষ–এ ধরনের মানুষ ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও হয়তো থাকবে। যতদিন পর্যন্ত পৃথিবী রয়েছে। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনেকেই আছে, ফেসবুকে সাধু সেজে লেখালেখি করে। ভালো ভালো কথা লিখে প্রচার করে। অথচ এদের অনেকে জীবনে কোনো ভালো কাজ করেছে কি–না তারা নিজেরাও জানে না। এ ধরনের মানুষ তাদের রূপ পরিবর্তন করে ক্ষণে ক্ষণে। এরা তোষামোদি করতেও পছন্দ করে। জ্ঞান, বিবেক, মনুষ্যত্ববোধের অভাব রয়েছে এদের মধ্যে। এরা জানে না যে, নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করে। একই সঙ্গে ক্ষতি করে সমাজের, দেশের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের। এদের চিনতে কষ্ট হয় অনেক সময়। এর প্রধান কারণ হলো এরা বহুরূপী। স্বার্থের প্রয়োজনে আপনার সুনাম করবে, স্বার্থ আদায় হলে রূপ মুহূর্তেই বদলায়। এদের কারণে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিভিন্ন কর্মস্থলে অনেক ক্ষতি হয়, সৃষ্টি হয় বিবাদ। এরা ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে এক প্রকার সুযোগ সন্ধানী হয়ে। নিজের যোগ্যতা না থাকায় বিভিন্নভাবে চাটুকারিতায় লিপ্ত হয়ে চাকরিতে আভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিল করে।
রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে এ ধরনের লোকের দেখা মেলে। দেশ, সমাজ তথা কর্মস্থল গোল্লায় যাক–এ নিয়ে তাদের চিন্তা নেই। আমরা যদি অতীতের দিকে ফিরে তাকাই দেখতে পাই মাটি, দেশ, ভাষা এবং সব ধরনের অধিকারের দাবিতে জীবন দিয়েছেন অসংখ্য দেশপ্রেমিক মানুষ। অথচ আমাদের কারও কারও মাঝে লোভ, ব্যক্তিস্বার্থ এত বেশি যে যা পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য কিছুতেই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এখন থেকে যদি আমরা নিজেদের পরিবর্তন না করি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও হয়তো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। ভুলে গেলে চলবে না, অতীতের এত সংগ্রাম সব তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই। আমরা সবাই বড় বড় কথা বলে জ্ঞান দিতে জানি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করি না। সৃষ্টিকর্তা ভালো–খারাপের ফলাফল পৃথিবীতেই দেবেন এবং মৃত্যুর পরও। যেমন কর্ম তেমন ফল। সময় থাকতে বুঝতে পারলেই ভালো। অসময়ে বা জীবনের শেষ বয়সে বুঝলে কোনো কাজে আসবে না। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করলেই কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ বুঝতে পারবেন। অতএব বিবেককে প্রশ্ন করতে শিখুন।