পৃথিবীতে হাজার হাজার মানুষ। সবাই সবার চেনা পরিচিত হয় না। তবুও কাউকে হারানোর বেদনায় সমব্যথি হয় মানুষ। তাসফীন, তেমনই একজন। আমার পরিচিত নয়। সেও আমাকে কখনও দেখেনি, আমিও তাকে কখনও দেখিনি। বাবা মা, কাউকে চিনি না। কোথায় থাকে তাও জানি না। কিন্তু স্কুল গেইটে টাঙানো ছবিটা দেখলে মনে হয় সে আমার কত চেনা, কত আপন। বলছি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র তাসফীনের কথা। দুষ্টু দুষ্টু চোখ, মিষ্টি মিষ্টি হাসি, মায়াময় চেহারা। স্কুলের পোশাকে উজ্জীবিত সে। যখন স্কুলের গেইটের দিকে যাই মনে হয় সে যেন তাকিয়ে আছে আমাদের সবার আসা যাওয়ার পথের দিকে। মনে হয় কিছু একটা বলতে চায় সে। প্রথম দিন দেখার পর ছবিটার দিকে আমি আর তাকাতে পারি না। মনের ভিতরটা না, ছিঁড়ে যায়! চোখ ভিজে আসে আনমনে। কি বা এমন বয়স তার, মাত্রই তো তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছিল। কত আনন্দ, কত রং, কত স্বপ্নই তো দেখেছিল সে। বাবা মায়ের কত আশা ছিল তাকে নিয়ে। কিছুই তো আর হল না। স্কুলের মাঠে কত দৌড়াদৌড়ি, স্কুলের সিঁড়িতে কত ছোটাছুটি সব বুঝি সাঙ্গ হল আজ। হয়ত আসতেও চেয়েছিল ৫ই অক্টোম্বর, স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে। কিন্তু হায়! আসা আর হলো না। কারই সেদিন ই তো চলে গেল সে, দূরে….. বহুদূরে। বাবা, তোমার জন্য খুব কষ্ট হয়। কেন? কেন এমন হলো, বলো তো বাবা? তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান ছিলে। তোমার জ্বর হয়েছিল, ডেঙ্গু জ্বর। খুব কষ্ট হয়েছিল? তাই না?…. পারছি না আর কিছু বলতে। হয়ত তুমি সব শুনছ, দেখছ। জানো, তোমার বন্ধু, তোমার টিচারদের মনটা আজ ভালো নেই। আর তোমার মা বাবা…. নাই বা বলি তাদের কথা। শুনলে হয়তো তোমার কষ্ট হবে খুব। জানো, তোমাকে নিয়ে লিখতে বসে কেঁদেছি অঝোরে। তুমি আমার সন্তানসম। বাবা, তোমার জন্য অনেক দোয়া করছি। যেখানে তুমি আছ আল্লাহ তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালো রেখেছেন। তোমার বাবা মাকে আল্লাহ শক্তি, ধৈর্য্য দিন। তাদেরকে কিছু বলার বা সান্ত্বনা দেওয়ার সাহস যে আজ আমার কিংবা আমাদের আর নেই। ভালো থেকো তুমি। অপরিচিত কেউ।