মীরসরাইয়ের হাট-বাজারে পুষ্টি সমৃদ্ধ পাহাড়ি লটকন

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ১৬ জুলাই, ২০২২ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন অবাধে পাওয়া যাচ্ছে পুষ্টি সমৃদ্ধ পাহাড়ি টক-মিষ্টি ফল লটকন।
জানা যায়, গাছের গোড়া থেকে শুরু করে ডাল-পালা পর্যন্ত ঝুলন্ত পুষ্পমঞ্জুরিতে থোকায় থোকায় ফল আসে। প্রতিটি পুষ্পমঞ্জরিতে পাঁচ থেকে পঞ্চাশটি ফল দেখা যায়। ফলের রং হলুদ ও ভেতরে দুই থেকে পাঁচটি বীজ হয়, বীজের গায়ে লাগানো রসাল অংশ খাওয়া হয়ে থাকে। জাত ভেদে টক বা টক-মিষ্টি স্বাদের এ ফলটির নাম লটকন।
দেশের অনেক স্থানে এই ফলটির ফলন বৃদ্ধি পেলেও আমাদের অতি পরিচিত এই ফলটির ফলন এই অঞ্চল থেকে দিনে দিনে বিলুপ্ত প্রায়। দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ কিছু জায়গায় এটি বুনোগাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। ইংরেজিতে ‘বার্মিজ গ্রেপ’ নামে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে এ ফলটি বুবি, বুগি, লটকা, লটকো, নটকো ইত্যাদি নামে পরিচিত। মার্চ মাসের দিকে লটকন গাছে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ব হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে লটকন বাজারে পাওয়া যায়। বর্তমানে মীরসরাই উপজেলা সদর, মিঠাছরা, বারইয়াহাট, জোরারগঞ্জ সহ বিভিন্ন হাটে পাওয়া গেলেও এখানে লটকনের আবাদ কমে যাওয়ায় দামও একটু বেশী। সরেজমিনে দেখা যায়, মীরসরাই সদর হাটে মুনছুর আলী নামে এক বিক্রেতা ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে এই ফল। অথচ অনেকেই জানায় কেজি ২০-৩০ টাকায় এখানেই বিক্রি হতো এক সময়। দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে, অথচ আমাদের ন্যাড়া পাহাড়ে নেয়া হচ্ছে এর উদ্যোগ। নরসিংদী জেলার শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও সদরে প্রচুর পরিমাণে চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া গাজীপুর, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আর এতো দূর থেকে আমদানি করে উপজেলার বারইয়ারহাট, আবুতোরাব, বড়তাকিয়া, মিঠাছরা, বড়দারোগারহাট, জোরারগঞ্জ, করেরহাট শান্তিরহাট বাজারে বিক্রয় হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, লটকনে ১৭৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৬৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৩৭ মিলিগ্রাম শর্করা, ১৭৭ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম ও ১০০ মিলিগ্রাম লৌহ রয়েছে। এ ছাড়া লটকনের বীজ মূল্যবান রং উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। সিল্ক, তুলা ও পোশাকশিল্পে এ রং ব্যবহার করা হয়।
লটকনের বংশবিস্তার দুভাবে হয়ে থাকে। বীজ ও অঙ্গজ পদ্ধতিতে। লটকনের পুরুষ ও স্ত্রী-গাছ আলাদা হয়ে থাকে। বীজ দ্বারা বংশবিস্তার করলে স্ত্রী-গাছের চেয়ে পুরুষ-গাছের সংখ্যা বেশি হয় এবং ফল পেতে পাঁচ থেকে সাত বছর সময় লাগে। অঙ্গজ তথা কলমপদ্ধতি ব্যবহারে তিন বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায় ও গাছ খাটো হয় বিধায় ফল তোলা সহজ হয়।
লটকন ফল চাষে অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এরা ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মাতে পারে। বাড়ীর আঙিনায় সহজে লটকন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন। দেশে ফল ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে লটকন জনপ্রিয় ফলের স্থান দখল করতে পারে বলে জানালেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, লটকনের চাষ বৃদ্ধির ফলে বেশ কয়েক বছর ধরেই এ বিভাগের শিক্ষকেরা মাঠপর্যায়ে বাগান পরিদর্শন ও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এর চাহিদা বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিক চাষাবাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু বিভিন্ন পর্যায়ের খামারীদের উদ্যোগ এবং সরকারের কৃষি ও বনজ বিভাগের প্রচারণা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিভিন্ন স্থানে কোরবানির মাংস বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধজোয়ারের পানিতে রাউজানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত