মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়লে দুই জন নিহত হয় বলে একটি স্বেচ্ছাসেবি জরুরি সেবা সংস্থার কর্মীরা জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নগরীটির স্বেচ্ছাবেসী জরুরি সেবা সংস্থা ‘পারাহিতা ডারহি’র নেতা কো অং বলেছেন, দুই জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি শহরে অভ্যুত্থান বিরোধীরা রাস্তায় নেমে এসে সামরিক শাসনের অবসান ও নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দেয়। এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভে সংখ্যালঘু বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাসহ কবি ও পরিবহন শ্রমিকরাও যোগ দেন। খবর বিডিনিউজের।
মান্দালয়ে পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস ও গুলির মুখে কিছু প্রতিবাদকারী গুলতি ছুড়ে জবাব দেয়। তবে পুলিশ তাজা গুলি ছুড়েছে না রবার বুলেট ব্যবহার করেছে প্রাথমিকভাবে তা পরিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। মান্দালয়ের ভয়েস অব মিয়ানমার সম্প্রচার মাধ্যমের একজন সহকারী সম্পাদক লিন খাংসহ গণমাধ্যম কর্মীরা ও মান্দালয়ের একটি জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, মাথায় আঘাত পেয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। ঘটনাস্থলে দুই জন মারা গেছেন বলে একজন স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মাথায় গুলি লেগে একজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। বুকে গুলিবিদ্ধ আরেকজনের পরে মারা যান। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কাউকে পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সেনাবাহিনী নতুন নির্বাচন করে বিজয়ীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা তা বিশ্বাস করতে পারছে না। ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেপিডোতে পুলিশ একদল প্রতিবাদকারীকে ছত্রভঙ্গ করার সময় এক তরুণী গুলিবিদ্ধ হন। মাথায় আঘাত পাওয়া ওই তরুণী শুক্রবার মারা যান। মিয়ানমারের এবারের অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা এটি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় গুরুতর আহত এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর কথাও নিশ্চিত করেছে।
সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর বিক্ষোভ : গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে মিয়ানমারে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দেশটির সংখ্যালঘু বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা। নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে সামরিক বাহিনীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ১ ফেব্রুয়ারি হওয়া অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জনগণের সরব প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার ইয়াংগনে নাগা, চিনসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ দেখায় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিক্ষোভকারীরা গণতান্ত্রিক সরকারকে পুনর্বহাল, সু চি ও অন্যান্য রাজনীতিকদের মুক্তি এবং ২০০৮ সালের সংবিধান বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। জাতিগত সংখ্যালঘুরা বিক্ষোভে নতুন সংবিধানে ফেডারেল সিস্টেম রাখারও দাবি জানিয়েছেন।
স্বৈরতন্ত্রের অধীনে দেশে ফেডারেল ব্যবস্থা চালু করতে পারবো না আমরা। আমরা সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি দিতে পারি না, বলেছেন শনিবারের বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক, নাগা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য কে জুং।
জাতিগত সংখ্যালঘুদের অনেক দল এখনও অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় নামেনি বলেও জানান এ যুবনেতা। জাতিগত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অং সান সু চির জোট গড়ার ব্যর্থতার প্রতিফলন এটি। এরপরও এই লড়াইয়ে জিততে হবে আমাদের। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। স্বৈরতন্ত্রের পতন পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো, বলেছেন জুং।
চিন জাতিগোষ্ঠীর সদস্য সালাই মন বোই শনিবারের বিক্ষোভে জাতিগত সংখ্যালঘুরা মূলত ৪টি দাবির কথাই জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করেছে। এগুলো হল- সংবিধান বাতিল, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, ফেডারেল সিস্টেম চালু ও সব বন্দির মুক্তি।
অনেকেই আছে যারা এনএলডিকে পছন্দ করে না। কিন্তু আমরা এনএলডিকে নিয়ে কথা বলছি না, সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রসঙ্গ টেনে বলেন এ যুবনেতা। স্বায়ত্তশাসন প্রসঙ্গে সু চির প্রতিশ্রুতি নিয়ে জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকায় অনেকে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হচ্ছে না, বলছেন শনিবারের বিক্ষোভের আয়োজকরা। এদিন জাতিগত সংখ্যালঘুদের বর্ণিল বিক্ষোভ ছাড়াও ইয়াংগনের সুলে প্যাগোডাতে কয়েকশ বিক্ষোভকারী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে।