মিশ্র ফল চাষে বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের কৃষি অর্থনীতি

উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৭ লাখ মেট্রিক টন

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | শনিবার , ৮ জুন, ২০২৪ at ১০:০১ পূর্বাহ্ণ

ফল চাষের মাধ্যমে গত দুই দশকে বদলে গেছে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের কৃষি অর্থনীতি। পাহাড়ের ঢালু ও সমতল ভূমিতে গড়ে উঠেছে আম, ড্রাগন, কমলা, মাল্টাসহ ১ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে মিশ্র ফলের বাগান। পাহাড়ে ফল চাষের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিজ্ঞানীরা। তবে দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না উঠা, ফল বিপণনের সময় অতিরিক্ত টোল আদায়, সেচ সুবিধা না থাকাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন চাষিরা। ফল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র গড়ে উঠলে ফলকেন্দ্রিক অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হওয়ার আশা কৃষি বিভাগের। দুই দশক আগেও এসব পাহাড়ে জুম চাষ হত। এখন গড়ে উঠেছে মিশ্র ফলের বাগান। দেশিবিদেশি জাতের আম, ড্রাগন, আনারস, লটকন, মাল্টা, কফি, কমলাসহ অন্তত ৪৫ প্রজাতির ফলের আবাদ হচ্ছে তিন পার্বত্য জেলায়। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া ফল উৎপাদনের অনুকূল হওয়ায় উৎপাদন বাড়ছে। প্রতিবছরই বাড়ছে ফলের বাগানের পরিমাণ।

চলতি মৌসুমে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ১ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে মিশ্র ফলের আবাদ হয়েছে। দুর্গম এলাকা গড়ে উঠা ফল বাগানে যাতায়াতের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পেলে বাড়বে উৎপাদন। তাই ডিপ ইরিগেশন চালুর দাবি ফল চাষিদের।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কৃষক অনিমেষ চাকমা রিংকু বলেন, পাহাড়ে আম, কলা, আনারস, কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল উৎপাদিত হয়। কিন্ত দুর্গম এলাকায় বাগান হওয়ার কারণে উৎপাদিত ফল শহরে আনার ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া জেলা শহর থেকে বিভিন্ন জেলায় ফল পাঠানের সময় তিনবার টোল দিতে হয়। এটা দেশের কোথাও নেই। টোলের খগড় না থাকলে এখানকার ফল চাষিরা আরো লাভবান হতে পারত।

খাগড়াছড়ির জেলা সদরের নতুন পাড়ার কৃষক মংশিতু চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি এলাকার হওয়ার কারণে আমাদের সেচ দিতে কষ্ট হয়। গভীর সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ফলের উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশের বাইরেও তা রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগ যদি আমাদেরকে কারিগরী সহায়তা দেয় তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে।

কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার সহযোগিতা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ খাগড়াছড়ি ফলদ বাগান সমবায় মালিক সমিতির সভাপতি তরুণ আলো দেওয়ানের। তিনি বলেন, বাগানের সেচের ব্যবস্থা না থাকার কারণে উৎপাদন কম হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা না কারণে সারসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সরকার সহায়তা দেওয়ার কথা। কিন্ত আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। সরকারের কাছে দাবি যাতে সহায়তা দেয়।

এদিকে পার্বত্য এলাকায় চাষাবাদের উপযোগী ফলের জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মালেক বলেন, শিক্ষিত তরুণরা ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে। গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত আম, কফি, মাল্টা, লটকনসহ বিভিন্ন ফল এখানে চাষাবাদ হচ্ছে। পাহাড়ের ঢালু অংশ ফল গাছ রোপাণের কারণে মাটির ক্ষয়রোধ হচ্ছে। পাহাড়ি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত ফলের জাত চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, চলতি মৌসুমে পার্বত্য তিন জেলায় প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে ফলের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিক টন। চট্টগ্রামে ফলের চাষ সমপ্রসারণে একাধিক প্রকল্প নিয়েছে সরকার। কফি ও কাজুবাদাম চাষ সমপ্রসারণ প্রকল্পের পাশাপাশি উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এখানে আমরা কৃষকদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি। পাহাড়ি এলাকায় সেচের সংকট সবচেয়ে প্রধান সমস্যা। এটি সমাধান করা গেলে ফলের উৎপাদন আরো বাড়বে। এখানে যদি ফুড প্রসেসিং কেন্দ্র স্থাপন করা যায় তাহলে অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। পার্বত্য এলাকায় উৎপাদিত ফলের মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাগরতলে সম্ভাবনার দুয়ার
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল মাছ ব্যবসায়ীর