মিরপুর টেস্টের ফল অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল প্রথম দিনেই। তবে তৃতীয় দিনে এসে হঠাৎ করে মরা গাছে যেন ফুল ফুটানোর চেষ্টা করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যাচ জিতবে কি হারবে, তার চাইতেও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল মিরাজের সেঞ্চুরি। সে সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে কত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে তা। চতুর্থ দিনে এসে ম্যাচে হারের চাইতেও বড় হতাশা হয়েছিল মিরাজের তিন রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা। তবে তৃতীয় দিনের খেলা শেষে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ দলের ভেতর কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে। কিন্তু চতুর্থ দিনে সে আত্মবিশ্বাস আর দেখা গেল না। ম্যাচটাকে জমিয়ে তোলার যে প্রত্যাশা ছিল সেটি আর হলোনা। সে সাথে হলোনা মিরাজের সেঞ্চুরিও। যার পরিণতি ৭ উইকেটের পরাজয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে হলো বাংলাদেশকে। চতুর্থ দিনে এক সেশনেই কাজ সেরে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের দিনের ৭ উইকেটে ২৮৩ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করা বাংলাদেশ টিকতে পেরেছিল কেবল ২৫ মিনিট। আর তাতে যোগ করতে পারে কেবল আর ২৪ রান। ৩০৭ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হন ৯৭ রানে। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার নব্বইয়ে আটকা পড়লেন তিনি। দিনের শুরুতে অনুমিতভাবেই দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে আক্রমণ শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। সাফল্য মিলতেও সময় লাগেনি। ১৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা নাঈম হাসান আউট হয়ে যান দিনের তৃতীয় বলেই। রাবাদার পিচ করে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিটি একটু বেশিই ভালো ছিল তার জন্য। রাবাদা পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। পরের ওভারে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মেরে নব্বইয়ে পা রাখেন মিরাজ। একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকেন শতরানের দিকে। তাইজুল ইসলামতো বরাবরই ব্যাট হাতে নির্ভর করার মতো। মিরাজের সেঞ্চুরি ও দলের লড়াইয়ের আশা তাই তখনও ছিল। মুল্ডারের বলে দারুণ এক শটে চারও মারেন তাইজুল। কিন্তু একটু বেশি সাহসী হয়ে যাওয়াতেই হয়তো বিপত্তি। চার মারার এক বল পরই ক্যাচ তুলে দেন তিনি স্লিপে। দলের আশা তখন শেষ। আশা কেবল মিরাজের মাইলফলক ঘিরে। কিন্তু ধরা দিল না সেটিও। শেষ জুটি বলেই হয়তো একটু অস্থির হয়ে উঠছিলেন মিরাজ। রাবাদার লেংথ বলে জায়গা বানিয়ে র্যাম্প শট খেলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রক্ষা হলোনা। ধরা পড়েন তিনি স্লিপে। ১০ চার ও ১ ছক্কা ১৯১ বলে ৯৭ রানে শেষ হয় তার লড়াই। এই নিয়ে এ বছর চারবার শতরানের আশা জাগিয়েও তিনি পারলেন না। গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে অপরাজিত থাকেন তিনি ৮১ রানে। অগাস্টে পাকিস্তান সফরে পরপর দুই টেস্টে খেলেন ৭৭ ও ৭৮ রানের ইনিংস। এবার আরেকটু এগিয়ে গেলেও তিন অঙ্কের দেখা পেলেন না। ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংসটিই এখনও পর্যন্ত তার একমাত্র টেস্ট শতরান। ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে আরও একবার বাংলাদেশের মূল হন্তারক কাগিসো রাবাদা। ৬৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১৫ বার ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন এই ফাস্ট বোলার।